ব্লক সভাপতি পরিবর্তন হতেই পঞ্চায়েত প্রধানসহ অঞ্চল সভাপতি এমনকি বুথ সভাপতিদের পদত্যাগ,বিড়ম্বনায় শাসকদল

দুর্গাপুর, ২১ জানুয়ারি: ব্লক সভাপতির পদ যেতেই পদত্যাগ পত্র জমা দিলেন প্রধান উপপ্রধান সহ সদস্যরা। ব্লক সভাপতিকে পদে ফেলানো না হলে লোকসভা নির্বাচনে উল্টো ফলের হুশিয়ারিও দিলেন তাঁরা। এই ঘটনাকে ঘিরে শোরগোল গোটা ব্লক। সমালোচনায় সরব বিরোধীরা। কোন বিতর্কই হয়নি দাবি জেলা সভাপতির। সম্প্রতি দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি পরিবর্তন হয়। সুজিত মুখার্জিকে সরিয়ে ব্লক সভাপতির পদে বসানো হয় শতদীপ ঘটককে। তারপরেই সুজিত মুখার্জির অনুগামীদের মধ্যে দেখা দেয় চূড়ান্ত ক্ষোভ। ব্লক সভাপতি হিসেবে সুজিত মুখার্জিকেই চাই এই দাবি তুলে রবিবার দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের প্রতাপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান উপপ্রধান সহ ১৬ জন পঞ্চায়েত সদস্য ও তিনজন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য পদত্যাগ পত্র জমা দেন। প্রতাপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মাধব দে বলেন, “পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর হাতে তাঁরা পদত্যাগ পত্র জমা দেন। সুজিত মুখার্জিকে ব্লক সভাপতি পদে পুন:রায় নিযুক্ত করতে হবে এই দাবিও তোলেন। সুজিত মুখারজিকে ব্লক সভাপতি পদে পুন:রায় নিযুক্ত করা না হলে লোকসভা নির্বাচনে বিপরীত ফল হবে বলেও জানিয়ে দেন।” এদিকে পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, “দলের নির্দেশ শেষ সিদ্ধান্ত। সুজিত মুখার্জি একজন ভালো কর্মী। সুজিত দলের সাধারণ সম্পাদক পদে নিযুক্ত হয়েছে। প্রধান উপপ্রধান সহ পঞ্চায়েত সদস্য পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের পদত্যাগের কথা তিনি উড়িয়ে দেন। দল যা সিদ্ধান্ত নেয় সেই সিদ্ধান্ত সবাইকেই মেনে নিতে হয় বলেও জানান তিনি।” দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপির বিধায়ক লক্ষণ ঘরুই সমালোচনায় সরব হয়ে বলেন, “তৃণমূলের দুর্নীতিতে ছেয়ে গিয়েছে গোটা রাজ্য। তৃণমূলের ব্লক সভাপতির পদ যেতেই প্রকাশ্যে এসেছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। লোকসভা নির্বাচনের দিন যতই করছে ততই তৃণমূলের কোন্দল প্রকাশ্যে আসছে বলেও কটাক্ষ করেন।”অপসারিত ব্লক সভাপতি সুজিত মুখোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রশ্ন তোলেন,”” কোন অপরাধে আমাকে ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরানো হল তা জানতে চাইছেন দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের সবাই।আমিও তাই জানতে চাইছি।””উল্লেখ্য সুজিত মুখোপাধ্যায় পান্ডবেশ্বরের প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক তথা বর্তমানে বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। আর এই জিতেন্দ্র তিওয়ারি র সাথে বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেসের পাণ্ডবেশ্বর এর বিধায়ক তথা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর “”সাপে নেউলের”” সম্পর্ক। নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জেলা সভাপতি হতেই চাপ বাড়ছিল সুজিত মুখোপাধ্যায়ের ওপর। বেশ কিছুদিন ধরেই দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের সভাপতি পদ সুজিত মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে অন্যকে এই পদে বসানো হবে এমন কথা বাতাসে ভাসছিল। শেষমেষ শতদীপ ঘটককে সেই পদে বসানো হয়। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম লগ্ন থেকেই এই ব্লকের সভাপতি থাকা সুজিত মুখোপাধ্যায় এই ব্লকের যোগ্য সেনাপতির পরিচয় বারংবার দিয়েছেন । দোলা সেন, মুনমুন সেন আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে পরাজিত হলেও এই ব্লকে জয়লাভ করেছিলেন। এমনকি জিতেন্দ্র তেওয়ারি ও নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী দুজনেই জোড়া ফুল চিহ্নে পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পাণ্ডবেশ্বর ব্লকের শোচনীয় পরাজয়ের পর দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লক থেকেই বিপুল ভোট পেয়ে বিধায়ক হন। সুজিত মুখোপাধ্যায়ের এত কৃতিত্ব সত্ত্বেও তাকে ব্লক সভাপতি থেকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে জোরালো বিতর্ক দেখা দিয়েছে দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকে। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে শাসকদলের এই কোন্দল না মিটলে বিরোধী বিজেপি দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকেও যে মাথাচাড়া দেবে তার বলার অপেক্ষা রাখে না।

Share it :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *