দুর্গাপুর, ৭ জুন:নির্বাচনের আগে সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে বলেছিলেন পুনর্বাসন বিহীন উচ্ছেদ করতে এলে বুলডোজারের সামনে দাঁড়াবেন। কিন্তু উচ্ছেদ শুরু হতেই এলাকায় যাওয়া তো দূরের বদলে দিয়েছিলেন কথাও। কিন্তু নির্বাচনের আগে থেকেই উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন তিনি। সাংসদ হতেই একেবারে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার উচ্ছেদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিলেন কীর্তি আজাদের। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিভিসিকে চিঠি দিয়ে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের রায় উল্লেখ করলেন তিনি।তবে পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেসেরই এক আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, “”মাননীয় সাংসদ সুপ্রিম কোর্টের যে রায় দেখিয়ে এই চিঠি দিয়েছেন সেই আইন ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। উচ্ছেদ নিয়ে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।””কীর্তি আজাদ ১৯৫৪ সালের জবরদখলকারীদের পুনর্বাসনের দাবিকে সামনে রেখে যে আইনের কথা উল্লেখ করেছেন তা কতটা বাস্তবায়িত হতে পারে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের দুর্গাপুরে ডিটিপিএস বস্তী উচ্ছেদের ক্ষেত্রে? এমন প্রশ্নের উত্তরে আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “”মাননীয় সাংসদ যে আইনটির কথা বলেছেন সেই আইনটি বাতিল হয়েছে ২০০৫ সালে। এই বিষয়ে ১৯৭১ সালের যে আইন ছিল, তা ২০১৯ সালের সংশোধিত হয়। তার চার নম্বর ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে এস্টেট অফিসার জবর দখলকারীকে নোটিশ পাঠাতে পারেন। জবর দখল কারীর পক্ষ থেকে পাঠানো উত্তর যদি এস্টেট অফিসারের কাছে সন্তোষজনক বলে মনে না হয় তাহলে পাঁচ নম্বর ধারা অনুযায়ী উচ্ছেদ করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই আইনের ১৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী ভারতবর্ষের আর কোন আদালতে সেই মামলা গৃহীত হবে না।””প্রশ্ন উঠতে শুরু করলো যে তাহলে বর্ধমান-দুর্গাপুরের নবীন সাংসদ কে আইনের এই ধারা সম্পর্কে কেন বিস্তারিত তথ্য না দিয়েই একটি চিঠি ধরিয়ে দেওয়া হল ডিভিসির চেয়ারম্যানকে?
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিভিসি ও ডিএসপি কারখানার সম্প্রসারণের জন্যে নিজেদের জমি পুনঃদ্ধারে নেমেছে। বছর খানেক ধরেই দফায় দফায় ওই জমিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারীদের উচ্ছেদের নোটিস দিচ্ছে। আচমকা ঘরের সামনে পাঁচিল দিয়ে দিচ্ছে। উচ্ছেদ রুখতে একাই লড়েছে স্থানীয়রা। তৃণমূল পাশে ছিল। আগের বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিং আহলুওয়ালিয়া এই উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন শুধুমাত্র মিডিয়ার সামনে। তাঁকে মাঠে নামতে দেখা যায়নি। এর প্রভাব পড়েছে ইভিএমেও। বিজেপির দিলীপ ঘোষকে হারিয়ে নতুন সাংসদ হয়েছেন কীর্তি। সাংসদ হয়েই ভোটের প্রচারে বারবার দুর্গাপুরের ডিটিপিএস কিংবা পলাশডিহা, মেইন গেট এলাকায় প্রচারে গিয়ে ডিভিসি ও ডিএসপির উচ্ছেদ নিয়ে স্থানীয়দের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন কীর্তি। কিন্তু এটা যে নিছক ভোটের প্রতিশ্রুতি নয়, তা এবার প্রমাণ করলেন তৃণমূলের সাংসদ কীর্তি আজাদ। তিনি শুক্রবারই ডিভিসির চেয়ারম্যানকে এই নিয়ে একটি চিঠিও দেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, পুনর্বাসন ছাড়া কোনোভাবেই উচ্ছেদ করা যাবে না এই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারীদের। এই প্রসঙ্গে তিনি সুপ্রীম কোর্ট ও হাইকোর্টের রায়ের কথাও উল্লেখ করেন ওই চিঠিতে। ইতিমধ্যেই ডিভিসির উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আমরণ অনশনও শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বেশ কয়েকজন অসুস্থও হয়ে পড়েন। এই খবর মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার ও সদ্য হওয়া সাংসদ কীর্তি আজাদের কানে আসতেই তাঁরা তৎপর হন। কীর্তি আজাদ সরাসরি চিঠি লেখেন ডিভিসির চেয়ারম্যানকে। শুক্রবার এই প্রসঙ্গে কীর্তি আজাদ বলেন ” পুনর্বাসন ছাড়া কোনোভাবেই কাউকে আইনত উচ্ছেদ করা যায় না। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিভিসি ও ডিএসপির এই উচ্ছেদ ঠিক নয়। আমি ওই এলাকার বাসিন্দাদের পাশে আছি ও থাকবো। আমার দলের নেতৃত্বরা ডিটিপিএস এলাকায় গিয়ে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেবেন। আমি সংস্থার চেয়ারম্যানকে চিঠি লিখে নিয়ম মেনে কাজ করার আবেদন করেছি।”কিন্তু আইনজীবীর সুব্রত মুখোপাধ্যায় আইনের যে জটিলতার কথা তুলে ধরলেন তাতে করে এটা স্পষ্ট যে dvc কর্তৃপক্ষ এই বেআইনি দখলদারদেরকে উচ্ছেদ করতে পারেন পুনর্বাসন ছাড়াই।যদিও এই বিষয়ে বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই জানিয়েছেন পুনর্বাসন দেওয়ার কথা। কিন্তু বিজেপি বিধায়ক এটাও বলেছেন যদি কারখানা অন্যত্র চলে যায় তার জন্য দায়ী থাকবে তৃণমূল কংগ্রেস। dvc র dtps কারখানার নতুন ইউনিট কি তাহলে বিশ বাঁও জলে চলে যাবে?