দুর্গাপুর উৎসবে বাংলাদেশের পতাকার ছবি সম্বলিত শাড়ির স্টল কে ঘিরে বিতর্ক, ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি বিজেপির

দুর্গাপুর, ৯ ডিসেম্বর : দুর্গাপুর উৎসবে বি-জোন রাজীব গান্ধীর স্মৃতি মেলা ময়দানে বাংলাদেশের পতাকার ছবি সম্মিলিত ব্যানার টাঙিয়ে বাংলাদেশী শাড়ি ও বিভিন্ন বস্ত্র সামগ্রী বিক্রির স্টলকে ঘিরে বিতর্ক। দুর্গাপুরের বিজেপির বিধায়ক লক্ষণ ঘড়ুইয়ের এই স্টল বন্ধ না করে দেওয়া হলে তা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়ার স্পষ্ট হুশিয়ারি।বাধ্য হয়ে মেলা কমিটি ওই স্টলটিতে বাংলাদেশের পতাকার ছবি সম্বলিত ব্যানার ছড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। উত্তপ্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ। হাসিনা সরকারের পতনের পর সেখানে লাগাতার সেই দেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালানোর অভিযোগ বারে বারে উঠে আসছে। সদ্য ইসকনের দায়ীত্মপ্রাপ্ত চিন্ময় মহারাজ কে গ্রেপ্তার করার পর থেকেই ক্রমশ সেই দেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়েছে। নিন্দার ঝড় উঠেছে গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে। এই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সনাতনী সংগঠনগুলি রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে সরব। সেই প্রেক্ষাপটে শুরু হয়েছে “”দুর্গাপুর উৎসব””।টলিউড ও বলিউডের বিভিন্ন সংগীত শিল্পীদের সমন্বয়ে ১২ দিন ধরে দুর্গাপুর উৎসবের সূচনা হয়েছে দুদিন আগে। গতবারের মতো এবারও দুর্গাপুর উৎসবকে ঘিরে রাজীব গান্ধীর স্মৃতির মেলা ময়দানে বিভিন্ন দোকানপাট তৈরি হয়েছে। গতবারের মতো এবারও বাংলাদেশী ঢাকাই শাড়িসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন বস্ত্র সম্ভার নিয়ে একটি স্টল তৈরি হয়। কিন্তু পরিস্থিতি একেবারে অন্যরকম। ভারতবর্ষের জাতীয় পতাকার অবমাননা সহ মৌলবাদী বিভিন্ন সংগঠন গুলির ভারত বিদ্বেষী বিভিন্ন বক্তব্য এবং বাংলাদেশের সেই দেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের নানান ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভারতবর্ষের মানুষ প্রতিনিয়ত দেখছেন। স্বাভাবিকভাবেই সেই দেশের নাগরিকদের ওপর ক্ষোভ বাড়ছে দেশবাসীর।আর সেইসময় কিনা দুর্গাপুর উৎসবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দেওয়া কাপড়ের স্টল! শুরু হল বিতর্ক। সেই বিতর্ক উস্কে দিলেন দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক। বাংলাদেশের কোন নাগরিকই নেই মেলায় হয়তো প্রচারের জন্য তারা ওই ব্যানার লাগিয়েছিল আমরা সেটা খোলা করিয়েছি। ৬ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে দুর্গাপুরের রাজীব গান্ধী স্মারক ময়দানে দুর্গাপুর উৎসব। চলছে নামিদামি শিল্পীদের সঙ্গীতা অনুষ্ঠান। মেলায় বসেছে কয়েকশো স্টল। তার মধ্যে একটি কাপড়ের স্টলে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ছবি দেওয়া ব্যানার দেওয়া হয়েছিল। বিক্রি হচ্ছিল ঢাকাই জামদানি, মসলিন ও রাজশাহী সিল্ক,তাঁত সহ নানান জিনিস। ৭ তারিখ সন্ধ্যায় মেলায় আসা মানুষজনের তা নজরে পড়তেই প্রতিবাদের সরব হয়। তারপরেই সেই ব্যানার নামলো দোকানদাররা। বিতর্ক উসকে দিয়ে দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘরুই বলেন,”তৃণমূল পরিচালিত দুর্গাপুর উৎসব মেলা কমিটির মদত ছাড়া এ কাজ কেউ করতে পারবে না। রাজ্যের মন্ত্রীদের বলবো অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। না হলে বিজেপি ওই দোকানে গিয়ে ভাঙচুর চালাবে। প্রতিবাদ করবে।” ব্যবসায়ী শামসুর রহমানের দাবি,”আমাদের পূর্বস্থলীতে বাড়ি। আধার কার্ড,প্যান কার্ড সবই আছে। দু পয়সা রোজকারের জন্য মেলায় আসি। মালিকের কথামতো আমরা বাংলাদেশের পতাকা দেওয়া ব্যানার লাগিয়েছিলাম। এখানকার মানুষজন বলতেই সেটা আমরা খুলে দিয়েছি।” এত ভালো একটা দুর্গাপুর উৎসব চলছে সেখানে বিরোধীরা চক্রান্ত করে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা লাগিয়ে দিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করছে বলে পাল্টা দাবি পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি উত্তম মুখার্জির। যদিও মেলা কমিটির সদস্য প্রবীর ঘোষাল বলেন,”প্রচারের জন্য হয়তো ব্যানার লাগিয়েছিল। আদতে ওরা কেউই বাংলাদেশের নাগরিক নয় বলে তিনি জানান।এরা এই দেশের নাগরিক। তারা বাংলাদেশের শাড়ি এনে বিক্রি করছে। তবে বাংলাদেশের পতাকার ছবি সম্বলিত ব্যানার তা আমরা অবিলম্বে খুলে দিতে বলেছি। “”

Share it :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *