দুর্গাপুর, ২৩ এপ্রিল :রক্তে লাল হল ভূস্বর্গ! জঙ্গিদের নিশানায় নিরীহ পর্যটক। পাহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় মর্মান্তিক মৃত্যু বাঙালি পর্যটক বিতান অধিকারীর। বেহালার বৈশালী পার্কের বাসিন্দা বিতান কর্মসূত্রে ফ্লোরিডায় থাকেন। কিন্তু, তার সঙ্গে জুড়ে আছে শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরের নামও। জন্ম থেকে পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা… বিতানের সব স্মৃতি আগলে রেখেছে এই শহর। তাই, বিতান অধিকারীর মৃত্যুর খবর কানে পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমেছে দুর্গাপুরে। ২০/২৮ সেকেন্ডারির এই বাড়ির বাসিন্দা ছিল বিতান অধিকারীর পরিবার। বাবা বীরেশ্বর অধিকারী অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টে কাজ করতেন। সেই সূত্রে দুই ছেলের পড়াশোনাও এই শহরে।

পরিবারের ছোট ছেলে বিতান, সকলের আদরের। সেই ছেলেটার মৃত্যুর খবর মেনে নিতে পারছেন না তাঁদের এক সময়ের প্রতিবেশিরা।১৯৮৫ সালে জন্ম হয় বিতানের।প্রথমে স্টিল টাউনশিপের দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার পরিচালিত হর্ষবর্ধন রোড প্রাথমিক বিদ্যালয় বেতানের পড়াশোনা শুরু। এরপরে শিবাজি রোড বয়েজ হাই স্কুলে পড়াশোনার পর ফুলঝোড়ের বিসি রায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে আইটি নিয়ে পড়েন। ২০০৮ সালে টিসিএসে চাকরি পেয়ে দুর্গাপুর ছাড়ে বিতান। বর্তমানে আমেরিকার ফ্লোরিডায় কর্মরত ছিলেন। ছুটি কাটাতে সম্প্রতি দেশে ফিরেছিলেন স্ত্রী সোহিনী ও সাড়ে তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে। উদ্দেশ্য ছিল কাশ্মীর দর্শন। কিন্তু সেই স্বপ্নময় সফর পরিণত হল এক মর্মান্তিক ট্র্যাজেডিতে।দুর্গাপুরের সেকেন্ডারি রোডে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার যে আবাসনে বিতানের জন্ম থেকে বড় হয়ে ওঠা সেই পাড়ার সেই ছোট্ট বিতানকে দেখা মানুষেরা আজ শোকে কাতর। বিতানের পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলো আনন্দ উৎসবে মেতে থাকাটাও আজ মনে পড়ছে তার প্রতিবেশীদের।

বিতানের মৃত্যুর খবর পেয়ে শোকাহত তাঁর সহপাঠীরাও। শিবাজি রোড বয়েজ স্কুলের সামনে এদিন সকলে জমায়েত করেন। ছোটবেলার বন্ধুকে হারিয়ে মর্মাহত বিতানের সহপাঠীরা।গত ১৬ এপ্রিল স্ত্রী-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কাশ্মীর ঘুরতে যান বিতান। ফেরার কথা ছিল ২৪ এপ্রিল। কিন্তু তার আগেই ২২ এপ্রিল সকালে পহেলগাঁওয়ের বাইসরান উপত্যকায় ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয় তার।

মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ, পর্যটকদের উপর হামলা চালায় জঙ্গিরা। জঙ্গিদের গুলিতে প্রথমে গুরুতর জখম হয়েছিলেন বিতান। তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। হামলার পরে উপত্যকায় হাই অ্যালার্ট জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার স্থানীয় শাখা ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। জঙ্গিদের খোঁজে উপত্যকা জুড়ে চলছে চিরুনি তল্লাশি।