তারাপীঠ, ৩০ ডিসেম্বর : ২০২৪ এর বিদায় আসন্ন। ২০২৫ কে স্বাগত জানানোর কয়েক ঘন্টা আগে সোমবতী অমাবস্যায় তারাপীঠ মহাশ্মশানে তন্ত্রসাধকদের মাতৃসাধনা।আর তাকে ঘিরেই উপচে পড়া ভিড়। বাঙলা পঞ্জিকা অনুসারে সোমবার সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে সোমবতী অমাবস্যা।ধর্মীয় মতানুসারে সোমবতী অমাবস্যা পুণ্যস্নান ও দানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি তিথি।পরিবারের পরলোকে পাড়ি দেওয়া সদস্যদের আত্মাশান্তি, শ্রাদ্ধ ও তর্পণে জলদানের জন্য এই বিশেষ অমাবস্যার গুরুত্ব অপরিসীম । সোমবার সোমবতী অমাবস্যার তিথি পড়ে গিয়েছে। ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভোর ০৪.০১ মিনিটে এই অমাবস্যা তিথি শুরু হয়ে গিয়েছে।

৩১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ভোর ৩.৫৬ মিনিট পর্যন্ত থাকবে এই তাৎপর্যপূর্ণ তিথি। ফলে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত রয়েছে অমাবস্যার তিথি। সোমবার এই অমাবস্যার তিথি পড়ায়, এই অমাবস্যাকে সোমবতী অমাবস্যা বলা হয়।তারাপীঠ মন্দিরের এক কোণে নদীর ধারে ঘন অরণ্য বেষ্টিত তারাপীঠ শ্মশানটি অবস্থিত। শ্মশানটি লোকালয় থেকে আগে দূরে থাকলেও বর্তমানে কালের প্রবাহে এই শ্মশান তার নির্জনতা হারিয়েছে। তবুও তারাপীঠের শ্মশানটি আজও শক্তিপীঠের বিরাট অংশ। লোককথা ও ধর্মীয়বিশ্বাস অনুযায়ী, তারা দেবীকে শ্মশানের অন্ধকারে বলিপ্রদত্ত ছাগের রক্ত পান করতে দেখা যায় অমাবস্যার নিশিরাতে।আজও তন্ত্রসাধকরা বিশ্বাস করেন নরকঙ্কাল ও শ্মশানক্ষেত্র তারা দেবীর সবচেয়ে প্রিয়। দেবীর যে চিত্রপট ভক্তবৎসলদের হৃদয়ে আঁকা হয়ে আছে, তাতে মা তারা শ্মশানক্ষেত্রনিবাসিনী রূপেই অধিষ্ঠাত্রী ।

তারাপীঠ মহাশ্মশানকে তন্ত্রসাধকেরা,অঘোরপন্থী রা শ্মশানক্ষেত্রকেই তাদের সাধনস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছেন শতাব্দী প্রাচীনকাল হতে।বহু সাধক পাকাপাকিভাবেই এই মহাশ্মশানে বসাবাস করেন। শ্মশানে অনেক জটাধারী সাধক তন্ত্রসাধনায় মানুষ ছাড়াও সাপ, বেজি,শিয়াল , হনুমান ও চন্ডালের করোটি ব্যবহার করেন। এগুলির পাশপাশি সাপের খোলসও রাখা থাকে। ভাল নর কপাল পূজা ও মদ্যপানের জন্য ব্যবহৃত হয়। কুমারী মেয়ে ও আত্মহত্যাকারী ব্যক্তিদের মাথার খুলির অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাস করা হয়।আজও তারাপীঠ মহাশ্মশানে ভক্তিভরে সাধকরা তাদের সাধনা করে চলেছেন। তারাপীঠ মহাশ্মশানে সাধকদের বধ্যভুমিতে বৃহন্নলাদের দেখা মেলে।তন্ত্রসাধক অমৃতদাস মহারাজ সোমবতী অমাবস্যায় তারাপীঠ মহাশ্মশানে তন্ত্রসাধনার আগে জানালেন,””মানবকল্যানার্থেই আমি ১৪ বছর তারাপীঠ মহাশ্মশানে তন্ত্রসাধনার জন্য আসি।আমি এখানেই সিদ্ধিলাভ করি।সব অমাবস্যার আলাদা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।সোমবতী অমাবস্যায় দেবাদিদেব মহাদেবের পূজার্চনা করলে সংসারের কল্যান হয়।এই তিথিতে মৃত ব্যাক্তিদের উদ্দেশ্যে দান এবং তাদের জন্য তর্পনে তাদের আত্মার শান্তিলাভ ঘটে।মা শ্মশানবাসিনী। পাগলা সাধক তন্ত্রগুরু বামদেব এই মহাশ্মশানে অমাবস্যাতে আশীর্বাদ দিতেও আসেন এমন বিশ্বাস আমাদের।তাই মা কে পুজাচ্চর্নার মধ্য দিয়ে সবার মঙ্গল কামনার্থেই প্রতি অমাবস্যার অন্ধকারে এই মহাশ্মশানে মহাযজ্ঞের আয়োজন।। “”