আত্মনির্ভর হব আমরা’, নির্বাচনের মুখে রাষ্ট্রায়ত্ত বন্ধ সার কারখানা পরিদর্শন করে বিতর্কের মুখে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী….

দুর্গাপুর,৪ মে: “”বিলগ্নীকরণের সিদ্ধান্ত বিজেপি আনেনি, তৎকালীন কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এনেছিলেন কিন্তু আমরা বিকশিত ভারত বানাতে চাই “”-এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে চুপিসারে রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা পরিদর্শন করে বিতর্কের মুখে কেন্দ্রীয় আইন ও বিচারবিভাগীয় মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল।দু’দশক আগে পাকাপাকিভাবে শিকল পড়েছিল দুর্গাপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানায় (হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন লিমি) । কাজ হারিয়ে পথে বসেছিল বহু শ্রমিক। সারের অভাব দেখা দিয়েছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। দু’দশক পর সেই কারখানার যন্ত্রাংশ ভেঙে পড়ছে, দেওয়ালে ধরেছে ফাটল, ডাকাতদের আতঙ্কেও কাঁপছে নিরাপত্তারক্ষীরা।

লোকসভা নির্বাচনের অবহে জঙ্গলে ঢাকা সেই বন্ধ হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন লিমিটেডে (HFCL) বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পরিদর্শন করে বিতর্কে জড়ালেন কেন্দ্রীয় আইন ও বিচারবিভাগীয় মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল। ১৯৬৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর হাত ধরে প্রায় ৬০০ একর জমির উপর গড়ে উঠেছিল হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন লিমিটেড। প্রায় ১২০০ স্থায়ী শ্রমিক কাজ করতেন। কয়েকশো অস্থায়ী শ্রমিকও ছিল। কারখানায় তৈরি গুণগত মানের ইউরিয়া পৌঁছে যেত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন লিমিটেড আবাসনও গড়ে ওঠে। চাষীরাও কম দামে সার পেয়ে উপকৃত হতেন।

কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর দেশে সারের চাহিদা ৩৫০ লক্ষ মেট্রিক টন। দেশে তৈরি হয় ২৩০ লক্ষ মেট্রিক টন সার। দুর্গাপুরের হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন লিমিটেড থেকেও ব্যাপক পরিমাণে ইউরিয়া উৎপাদন হত। ১৯৯০ সালের গোড়া থেকেই রুগ্ন হতে থাকে দুর্গাপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন লিমিটেড। ১৯৯৮ সালে বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন। আর ২০০২ সালে একেবারেই শিকল উঠে যায় কারখানার মূল প্রবেশদ্বারে। বহু শ্রমিককে অন্যত্র স্থানান্তর করে দেওয়া হয় আবার অনেকে কাজ হারিয়ে পথে বসেন। ২০১৯ সালে বর্ধমান দুর্গাপুরে বিজেপির টিকিটে জিতে সাংসদ হওয়ার পর সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া এই সার কারখানা খোলার বিষয়ে আশার আলো জাগিয়েছিলেন।

কিন্তু আজও তা জ্বলে নি। আবার একটি লোকসভা নির্বাচনের মুখে দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় আইন ও বিচারবিভাগীয় মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল এসেছেন দুর্গাপুরে। বর্ধমান দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের সাথে প্রচারও করছিলেন। তারই মাঝে চুপিসারে বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানায় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেছিলেন,”সার কেন বিদেশ থেকে আসবে? আমরা নিজের দেশেই সার উৎপাদন করব। আত্মনির্ভর ভারতের এটাও একটা অংশ। বিহারে এবং দক্ষিণ ভারতে বন্ধ কারখানা খুলেছে তাহলে বাংলায় কেন নয়। আমরা বিকশিত ভারত বানাতে চাই। বাংলা বিকশিত হলে ভারত বিকশিত হবে।

বিলগ্নীকরণের সিদ্ধান্ত বিজেপি আনেনি, তৎকালীন কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এনেছিলেন বলেও দাবি তুললেন। যদি পর্যাপ্ত পরিকাঠামো থাকে তাহলে বন্ধ কারখানার খোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিলেন।” বিজেপির মন্ত্রীরা মানুষকে ভুল বোঝানোর জন্য এসব করছেন কটাক্ষ করে পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন,”যদি কারখানা খোলা হয় তাহলে উত্তম, আমরা বিজেপিকে স্যালুট জানাবো। কারণ এই কারখানা বিজেপির প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ির আমলেই বন্ধ হয়েছিল। ২০২৪ এর পর বিজেপি ক্ষমতায় এলে এই কারখানা যদি খোলা হয় তাহলে আমরা আপনাদের ফটো নিয়ে মালা পরাবো। আর না খোলা হলে কুশষ্পত্তলিকা দাহ করব।”এদিকে সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের সাফাই,”লোকসভা নির্বাচনের আচার বিধি লাগু হওয়ার পর এখন উনি কিসের মন্ত্রী? কি করে রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার ভেতরে ঢুকতে পারেন। নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন করে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের কাছে মামলা করা উচিত মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আর কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও।””

Share it :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *