ঠিকাদারি সংস্থাকে দিয়ে কয়লা উত্তোলন, কয়লাখনি সম্প্রসারণের উদ্বোধন বন্ধ হল সমস্ত শ্রমিক সংগঠনের বাধায়

দুর্গাপুর, ১২ মার্চ: একসময় কয়লা খনি বেসরকারি হাতেই ছিল। সেই সময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর রানীগঞ্জের নারায়নকুড়ি তে কয়লা খনির মালিক ছিলেন। সেসব এখন ইতিহাস। ভারতবর্ষের প্রাক্তন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সময় কালে কয়লাখনি গুলিকে জাতীয়করণ করা হয়।ইসিএল,বিসিসিএল র মত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার জন্ম হয়।এ রাজ্যের আসানসোল ও দুর্গাপুর মহকুমায় রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেডের অন্তর্ভুক্ত বহু কয়লাখনি থেকে উত্তোলিত কয়লা সারা দেশে এমনকি বর্হিবিশ্বের বহু দেশের কয়লার যোগানকে মিটিয়েছে।কিন্তু বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে যে ইস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেড বিভিন্ন কয়লা খনিতে কয়লা উত্তোলনের কাজের বরাত দিয়ে দিচ্ছে বেসরকারি ঠিকাদারি সংস্থাগুলিকে। আর তাতেই ক্ষোভ বাড়ছে শ্রমিক কয়লা খনি শ্রমিক মহলের।

এ রাজ্যের শাসকদলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত কয়লা খাদান শ্রমিক কংগ্রেস কয়লা খনি গুলিতে বেসরকারি উদ্যোগে কয়লা উত্তোলনের প্রবল বিরোধিতা শুরু হয়। বেশ কয়েক মাস আগে দুর্গাপুরের ঝাঁঝরা কয়লা খনিতে এই মর্মে বড়সড় আন্দোলন দেখা যায়। সেই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন আসানসোল ও বীরভূম জেলার দুই সাংসদ যথাক্রমে শত্রুঘ্ন সিনহা এবং শতাব্দি রায়। এছাড়াও মন্ত্রী মলয় ঘটক, পাণ্ডবেশ্বর এর বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, জামুড়িয়ার বিধায়ক হরেরাম সিং সহ INTTUC র পশ্চিম বর্ধমানের জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটক সহ অন্যান্য নেতৃত্বরা। ধারাবাহিকভাবেই আন্দোলন চলছিল এতদিন পর্যন্ত। কয়লা খনির সমস্ত শ্রমিক সংগঠন এই একই ইশ্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের কয়লা মন্ত্রকের এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনায় সরব হন। মঙ্গলবার দিন দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের তিলাবনী কয়লা খনির তিলাবনী এম ডি ও প্রজেক্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের দিন ধার্য হয়। ইসিএলের সিএমডি সমীরণ দত্ত এই প্রকল্পের উদ্বোধন করবে বলে ইসিএলের পক্ষ থেকে ঘোষনা করা হয়।মঞ্চ বাঁধা থেকে চেয়ার সাজানো সমস্ত কিছুই তৈরি ছিল। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনগুলির একযোগে প্রবল বিরোধিতা ও বিক্ষোভের কারণে এই উদ্বোধন বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিবছর ১.৮৬ লক্ষ মেট্রিক টন কয়লা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এই প্রকল্পের কাজ ঠিকাদারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে আজকের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় প্রাক্তন সিপিআইএম সংসদ বংশ গোপাল চৌধুরীকে। তিনি স্পষ্ট অভিযোগ করে জানান, “”এরা এখন কয়লা উত্তোলনের কাজের বরাত দিচ্ছে ঠিকাদারি সংস্থাকে। আগামী দিনের সমস্ত কয়লা খনি তুলে দেওয়া হবে বেসরকারি হাতে। বহু কষ্টে কয়লা খনি জাতীয়করণ করা হয়েছিল। কয়লা খনি থেকে দেশের সরকার যে টাকা পায়, সেই টাকা সাধারণ মানুষের টাকা। আর সেই টাকা দিয়েই জনকল্যাণের কাজ করা হয়। তাই আম্বানি আদানিদের হাতে নরেন্দ্র মোদিকে আমরা কয়লা খনি বিক্রি করতে দেব না। “”আইএনটিটিইউসি পশ্চিম বর্ধমানের জেলা সভাপতি এবং পাণ্ডবেশ্বর এর বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী একই সুরে অভিযোগ করে বলেন, “”কয়লা খনির সমস্ত শ্রমিক আজ এক কাট্টা।মোদি সরকার দেশের লক্ষ লক্ষ কয়লা খনি শ্রমিকদের মুখের খাবার কেড়ে নিতে চাইছে। আমরা তা হতে দেব না। তৃণমূল কংগ্রেস সর্বপ্রথম লড়াই নেমেছে এই ইস্যুতে। আজ ইসিএল এর সিএমডি উদ্বোধন করতে আসার আগেই বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিক সংগঠনগুলি। যদিও এই বিষয়ে ইসিএলের পক্ষ থেকে টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর নীলাদ্রি রায়ের সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।।

Share it :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *