দুর্গাপুর, ১৩ সেপ্টেম্বর : হঠাৎই রাজ্যে নরেন্দ্র মোদির স্লোগানে স্ট্র্যাটেজি বদল । জয় শ্রীরাম ছেড়ে “”জয় মা দুর্গা””,”” জয় মা কালী “”এমন ধ্বনি শোনা গেছে নরেন্দ্র মোদির মুখে। কিছুটা আঁচ পাওয়া গিয়েছিল। বাংলা সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব ইউনেস্কোর কাছে হেরিটেজ তকমা প্রাপ্ত দুর্গোৎসব। ২০২৬ এর নির্বাচনের আগে সেই দুর্গোৎসবকেই নিবিড় জনসংযোগের হাতিয়ার করতে শনিবার গেরুয়া শিবিরের পক্ষ থেকে সল্টলেকে সন্ধে সাতটা থেকে আয়োজিত হবে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল সহ বিজেপির এই রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত সদস্যরা। যদিও এই বৈঠকে শারীরিক অসুস্থতার জন্য উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন বিজেপির পক্ষ থেকে এই রাজ্যের দুর্গোৎসবের কনভেনার তথা দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক লক্ষণ ঘড়ুই।

বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা দুর্গা পুজোকেই পাখির চোখ করতে চাইছেন এই রাজ্যের মানুষদের সাথে গেরুয়া শিবিরের নেতৃত্বের নিবিড় জনসংযোগের জন্য। সরাসরি বিজেপির দুর্গাপূজার সংখ্যা দুর্গাপুরে লক্ষণ ঘোড়ুই এর একটি,কলকাতায় সজল ঘোষের দুর্গাপূজা, বীরভূম জেলার সিউড়িতে বিজেপি পরিচালিত একটি দুর্গোৎসব এবং এ রাজ্যে আরও দু তিনটি বিজেপি নেতৃত্বের হাত ধরে দুর্গা পুজোর আয়োজন হয় বলে জানালেন লক্ষণ ঘোড়ুই। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “”বিজেপি কার্যকর্তাদের এলাকায় এলাকায় যে পুজোগুলি হয়ে থাকে সেই পুজোর সঙ্গে ওই এলাকার কার্যকর্তাদের অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকতে হবে। পুজো কমিটিতে থাকা, পুজোর আয়োজন এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা, সাধ্যমত চাঁদা দেওয়া, সাধারণ মানুষদের সাথে গল্পগুজব আড্ডায় মেতে থাকা। এবং নিজের এলাকার দুর্গোৎসবকে সুশৃংখলভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে বিজেপি কার্যকর্তাদের কমিটির সামনের সারিতে থাকার জন্য পার্টির পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

“”তবে যেহেতু রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয় বাংলার বিভিন্ন বারোয়ারি পূজা উদ্যোক্তাদের সেখানে বিজেপি নেতাদের আদৌ কি ঠাঁই হবে? উত্তরে লক্ষণ ঘোড়ুই বলেন, “”আমরা দুর্গোৎসবে এই অনুদান দেওয়ার বিরোধিতা করছি। অনেক পূজা কমিটি এর আগে অনুদান ফেরত দিয়েছে। বাংলায় দুর্গোৎসব অনুদান দেওয়ার পর আয়োজিত হচ্ছে এমনটা নয়। আমরা আগে গ্রামীন এলাকার মানুষেরা নিজেরা চাঁদা দিয়ে দুর্গা পুজো করতেন। তাতে পূজোর সাথে মানুষের নিবিড় সংযোগ ছিল। আমরা মানুষের সেই সংযোগ চাইছি দুর্গা পূজার সাথে। আর্থিক অনুদান দেওয়ার বিরোধিতা আগেও করেছি, এখনো করছি।””তাহলে কি ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে দুর্গাপুজোর মেগা ইভেন্টকে কি ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের জন্য গেরুয়া শিবিরের প্রচারকার্যের জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে? বিজেপির পক্ষ থেকে রাজ্যের দুর্গোৎসবের দায়িত্বপ্রাপ্ত কনভেনার লক্ষণ ঘড়ুই বলেন, “”দুর্গোৎসবের সময় বাঙালি আড্ডায় মেতে ওঠেন।

অনেকে যারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে থাকেন বা বিদেশেও থাকেন তারাও এসে উপস্থিত হন উৎসবের এই সময়কালে। আর বাঙালির আড্ডায় অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ক উঠে আসবে এটাই স্বাভাবিক। ভারতীয় জনতা পার্টির যেটা লক্ষ্য সেটাই মানুষের সামনে তুলে ধরা। “”উল্লেখ্য এর আগে বামপন্থীদেরকে দেখা গেছে দুর্গোৎসবের সময় তারা বড় বড় পুজো আয়োজনের জায়গাগুলিতে বুক স্টল করে এখানে কমিউনিস্ট মতাদর্শের উপর লেখা বই বিক্রি করতে।তৃণমূল কংগ্রেস কেও দেখা গেছে বড় বড় পূজো আয়োজনের সামনে তাদের পার্টির মুখপাত্র জাগো বাংলার নামে স্টল তৈরি করতে।

২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন এখন শাসক দল এবং এ রাজ্যের প্রধান বিরোধী বিজেপির কাছে পাখির চোখ। তার আগে বাংলায় এই দুর্গোৎসব সবচেয়ে বড় ইভেন্ট। এই সুযোগকে হাতছাড়া করতে নারাজ কোন পক্ষই। তাই ভারতীয় জনতা পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে এই দুর্গোৎসবের বিরাট আয়োজনের আসরে ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার কার্য চালানোর নির্দেশিকা যে কার্যকর্তাদের পৌঁছাতে চলেছে তা কিন্তু দিনের আলোর মত স্পষ্ট। লক্ষণ ঘোড়ুই এই প্রসঙ্গেই বলেন, “”সমস্ত কার্যকর্তাদের নির্দোষ দেওয়া হয়েছে তাদের নিজে নিজে এলাকার দুর্গোৎসবের সাথে সম্পূর্ণভাবে জড়িয়ে থাকার জন্য।”” বাংলার সবচেয়ে বড় উৎসবের এই আয়োজনে নিজেদের দলের প্রচার থেকে কোন রাজনৈতিক দলই দূরে থাকতে নারাজ। তার ওপর ২০২৬-এ বিধানসভা নির্বাচন। সবমিলিয়ে তাই এবারে দুর্গোৎসব সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেই তাদের দলের মতাদর্শ সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে যে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইভেন্ট তা বোঝাই যাচ্ছে।