দুর্গাপুর, ১৩ ডিসেম্বর :এটাই বোধহয় দেখা বাকি ছিল শাসকদলের জন্মলগ্ন থেকে পার্টিকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্য প্রাণপাত করা নেতা-কর্মীদের।গ্রীনরুমে তখন দেশের গর্ব ফিউসন ও গজলের সম্রাট পদ্মশ্রী ও দুবারের জাতীয় পুরষ্কারজয়ী সঙ্গীতশিল্পী হরিহরণ।এবারের দুর্গাপুর উৎসবের সবচেয়ে বেশি বাজেটের শিল্পী।বেচারি লাভলী রায়! কোন লাভলী রায় বলুনতো? রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের জন্ম লগ্ন থেকে মহিলা নেত্রী হিসাবে যিনি লড়াইয়ের ময়দানে সবচেয়ে প্রথম সারিতে থেকে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছিলেন। দু-দুবারের দুর্গাপুর নগর নিগমের কাউন্সিলর। একবার মেয়র পরিষদ সদস্যাও ছিলেন।
খাঁন্দরা কলেজে পড়াশোনা সময় থেকে লাভলি রায় দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলের হয়ে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে তার লড়াই শুরু করেন। কিন্তু তাতে কি? রাজনৈতিক “”বহুরূপী দাদার”” নিদান ছিল বাউন্সারদের উদ্দেশ্যে, “”কাউকে ঢুকতে দিবি না “”।বেচারা বাউন্সাররা তো আর চেনেন না লাভলী রায় কে? তাই লাভলী রায় শিল্পী হরিহরণকে গ্রীণরুমে একবার দেখবো বলে গেটের সামনে যেতেই বাউন্সারদের কড়া ধমক খেয়ে কাউকে কিছু না বলে অভিমান, যন্ত্রণা আর অপমান বুকে নিয়ে উৎসব প্রাঙ্গণ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন ভারতবর্ষের প্রথিতযশা সংগীত শিল্পী হরিহরণের গান না শুনেই।দুর্গাপুর স্টিল টাউনশিপের বারবার রাজনৈতিক জার্সি বদলকারী এক দাদার উৎসব মঞ্চের সামনে দাদাগিরি দেখে দুর্গাপুর নগর নিগমের আরও এক মহিলা প্রাক্তন কাউন্সিলর মঞ্চের সামনের সারিতে ভিআইপি আসনে বসে থাকা অবস্থাতেই ফিসফিস করে বললেন “”আমাদেরকে আবার উঠিয়ে দেবে না তো ? “” আসলে উৎসবের আঙিনায় এবার নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী উদ্বোধনের পর থেকেই আর আসেননি, মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার তিনিও রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসাবে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত, আর অভিনন্দন কোথাও যেন এবার নিজের ছন্দ হারিয়ে ফেলেছেন তাই তিনিও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন দুর্গাপুর উৎসব থেকে।আর সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে আসরে নেমে পড়েছেন ওই যে “”সুবিধাবাদী দাদা””।
কাজের ছেলে বলতে হাতে গোনা দু চারজন। তাই রেকর্ড বাজেটের এবারের দুর্গাপুর উৎসব যেন লাভলী রায়দের মত শাসকদলের অনেক নেতা কর্মীকে অপমান আর অবহেলার ইতিহাস কে বুকে জড়িয়ে নিল।বাঙলায় একটা বহুল প্রচলিত কথা “”কাকে দিয়েছেন রাজার পাট?””-২০২৩ এ দুর্গাপুর উৎসব ছিল উৎসাহ আর উদ্দীপনার উৎসব। এই উৎসবে টলিউডের হিট ছবি তিনমুর্তি কে মনে করিয়ে দিয়ে তিন নায়ক প্রদীপ মজুমদার, নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও কবি দত্ত একযোগে শাসকদলের দুর্গাপুর নগর নিগমের সমস্ত প্রাক্তন কাউন্সিলরদের, বিভিন্ন ব্লকের নেতা-কর্মীদের নিয়ে সাফল্যের সাথে দুর্গাপুর উৎসবকে এক অন্য মাত্রায় উত্তীর্ণ করেন।শিল্পাঞ্চলের মানুষ অপেক্ষা করতে থাকেন আগামী অর্থাৎ ২০২৪ দুর্গাপুর উৎসব এর জন্য।কিন্তু দুর্গাপুর উৎসব ২০২৪ এর গোড়া থেকেই উদ্যোক্তা কারা হবেন তাই নিয়ে যেন শনির কূ-দৃষ্টির কোপে পড়ে। দুর্গাপুর চেম্বার অব কমার্স কে দায়ীত্ম দেওয়া হয় উৎসবের আয়োজনের।কিন্তু কি কারনে হটাৎ উদ্যোক্তাদের এই রদবদল?সুত্র মারফত পাওয়া খবর অনুযায়ী ২০২৩ এর উৎসবের বিপুল পরিমাণ “”আদায়ীকৃত অর্থের হিসাবে গরমিল।”” আর এখান থেকেই যেন ২৩ এর উৎসব কমিটির সেই সাফল্যের গাঁথায় কলঙ্কের পাঁক লাগে।অভিভাবক প্রদীপ মজুমদার পড়েন বিপাকে।স্পষ্ট বিভাজন হয়ে যায় তিনমূর্তির মধ্যে বলে গুঞ্জন। আর এই সুযোগকে কাজে লাগায় দুর্গাপুরের কিছু “”ধান্দাবাজ ক্ষমতালোভী।”” গতবার উৎসবের আঙিনায় দাঁড়িয়ে এই সুরেলা সফরকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিতে ১২ -১৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেটের কনকনে ঠান্ডায় মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যা নামলেই পৌঁছে যেতে উৎসব প্রাঙ্গনে। হাসিমুখে সবার সাথে কথা বলে পরের দিনের অনুষ্ঠানের রুট ম্যাপ তৈরি করতেন। সঙ্গী হিসেবে পাশে দেখা যেত সাদা শাল জড়ানো পাণ্ডবেশ্বর এর বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং অন্যপাশে ব্লেজার পরিহিত কবি দত্তকে।তৃণমূল কংগ্রেসের প্রায় সমস্ত প্রাক্তন কাউন্সিলর,কর্মীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উৎসবকে সফল করে তোলেন।কিন্তু এবার সবাইকে ক্লিন বোল্ড করে দিয়ে “”সুবিধাবাদী রাজনৈতিক ছদ্মবেশী “”যিনি বারবার শিবির বদল করার জন্য দুর্গাপুরে বিখ্যাত, যিনি দুর্গাপুরের সিস্টেম থেকে দুর্গাপুর স্টিল টাউনশিপের সমস্ত বড় বড় ইভেন্টে নিজেকে জড়িয়ে রেখে নিজের তহবিল কে ফুলিয়ে তুলেছেন তিনি হয়ে গেছেন উৎসবের মধ্যমণি। তবে নচিকেতার একটা গানের কয়েকটি লাইনকে মনে রেখে বলতেই হয়, “”একদিন ঝড় থেমে যাবে/পৃথিবী আবার শান্ত হবে। “”এই ছদ্মবেশীরা একদিন ধরা পড়বেই। প্রদীপ বাবুর অভিভাবকত্বে নরেন বাবু, কবি বাবু আবার এক মঞ্চে হাতে হাত রেখে দুর্গাপুর কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথ নেবেন। আপনাদের আর কিছু পাওয়ার নেই। প্রতিবেদক আপনাদের সাথে কথা বলে জানতে পারে আপনাদের তিনজনের লক্ষ্য কিন্তু একটাই “”দুর্গাপুর কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া””।যদি তাই হয় তাহলে যার বুকে শক্তিশেল এতদিন লাগার কথা, তিনি কেন আপনাদেরকে “”শক্তিশেলের “”আঘাতে ছিন্নভিন্ন করে দিল?কেন আপনারা তিনমূর্তি একযোগে ডাক দিচ্ছেন না দুর্গাপুরের সিস্টেমের টাকা কোথায় গেল? তা জানার জন্য।সবাই আশাবাদী আপনারা তিন মূর্তি আবার একসাথে উৎসব মঞ্চে পাশাপাশি বসবেন, দূরে দূরে নয় , আবার দুর্গাপুর উৎসব নতুন করে ছন্দ ফিরে পাবে ২০২৫ সালে।শাসক দল থেকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা দুর্গাপুর উৎসবে ন্যূনতম সম্মানটুকু পাবেন। তা নাহলে এই “”রাজনৈতিক মুখোশধারী ধান্দাবাজদের “” হাতে দুর্গাপুরের সম্মান ছেড়ে দিলে লাভলি রায়ের মতো সবাইকে অসম্মানিত হয়ে উৎসব প্রাঙ্গন থেকে দুচোখে জল নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। সুপরিকল্পিতভাবে যারা বিভেদের বীজ বপন করে আজ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইছেন যদি তাদেরকে চিনতে আপনাদের অসুবিধা হয় তার জন্যই নিউজ হান্ট এর এই বিশেষ প্রতিবেদন। দুর্গাপুর শহর সভ্য, ভদ্র, সাংস্কৃতিক রুচিসম্পন্ন মানুষদের শহর বলেই পরিচিত। এই শহরে লতা মঙ্গেশকর থেকে কিশোর কুমার, মান্না দের মত বড় বড় শিল্পীরা অনায়াসে অনুষ্ঠান করে গেছেন, হাসিমুখে অটোগ্রাফ বিলিয়ে গেছেন দুর্গাপুরবাসীকে।। এই শহরে এসেছেন কপিল দেব, গাভাস্কার, সৌরভ গাঙ্গুলী সহ চলচ্চিত্রের বহু নামিদামি শিল্পীরা দুর্গাপুর এসে দুর্গাপুর শহরের সংস্কৃতিকে এবং দুর্গাপুরের দর্শকদের সুমিষ্ট আচরণের প্রশংসা করে গেছেন।কোনদিন এখানে বাউন্সার দিয়ে দুর্গাপুর বাসীকে আটকাতে দেখা যায়নি। এই বাউন্সার তাদের প্রয়োজন যারা লক্ষ মানুষকে কাঁদিয়ে, তাদের কান্না ভেজা অর্থে নিজেকে প্রভাবশালী প্রতিপন্ন করে লক্ষপ্রদীপ জ্বালানোর আয়োজন করে অতি সন্তর্পনে তিন মূর্তির মধ্যে ফাটল ধরিয়ে নিজের “”দাদাগিরিকে”” কায়েম করতে চেয়েছেন । ২০২৫ দুর্গাপুর উৎসবের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।আশা করি সবার শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। সেদিন আর লাভলি রায়দের অপমানিত হতে হবে না।