দুর্গাপুর, ১৪ ডিসেম্বর : ওঁরা কেওই হয়তো সেই অর্থে নাটোরের বনলতা সেন নন, তবু ওঁদের কাছেই দু দন্ড শান্তির খোঁজে ছুটে আসেন হৃদয় তাপে জর্জরিত কত শত মানুষ। হয়তো ক্ষণিকের ভালোবাসার রেণুটুকুর পরশ পেতেই সমাজের এই ব্রাত্যজনেদের দুয়ারে আসেন পথশ্রান্ত পথিক, হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে আসা কোন দিকভ্রান্ত মুসাফির। ওঁরা যৌনকর্মী। ভারতের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশে আজও ওঁদের বড় অবজ্ঞা,বড় ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখা হয়। পরিবার, পরিজন, সমাজ সংসার থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন পৃথিবীর আদিম পেশার এই মানুষগুলো কিভাবে বেঁচে আছেন, রক্তমাংসের এই মানুষগুলোর সামাজিক ও বৌদ্ধিক মর্যাদা কোন স্তরে, তাঁদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য,অর্থনৈতিক অবস্থান, বাসস্থান, সন্তানদের ভবিষ্যৎ, বার্ধক্যের পুনর্বাসন, সরকারি সুযোগ সুবিধা কতখানি ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে সম্প্রতি ইউরোপের স্পেনে আয়োজিত হয় যৌনকর্মীদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন। সেই সম্মেলনে বক্তব্য রাখার জন্য পশ্চিম বঙ্গ থেকে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন যৌনকর্মীদের সংগঠন দূর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ডঃ শরদিন্দু জানার যোগ্য উত্তরসূরী, শিষ্যা ও দূর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির অন্যতম নেত্রী ভারতী দে। বর্ষীয়সী এই মহিলা স্পেনে আয়োজিত ওই আন্তর্জাতিক মঞ্চে এ দেশের যৌনকর্মীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানসিক অবস্থান ইত্যাদি সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন। এই আন্তর্জাতিক ফোরামে তিনি যৌন কর্মীদের অধিকার, কর্তব্য ইত্যাদি সম্পর্কিত নানান দিক তুলে ধরেন।দেশে ফিরে ভারতী দেবী তাঁর এই বিদেশ সফরের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন বাংলার বিভিন্ন এলাকাস্থিত দূর্বার সংগঠনের মঞ্চে। শনিবার দুর্গাপুরের কাদারোড দূর্বার সমন্বয় সমিতির তরফে ভারতী দেবীকে সংবর্ধিত করা হয়।পুষ্পস্তবক, উত্তরীয় দিয়ে তাঁকে উষ্ণ অভিনন্দন জানানো হয় দূর্বার ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে। এদিন ভারতী দেবীকে সংবর্ধিত করেন দূর্বারের স্বশাসিত পরিচালন মন্ডলীর সদস্য ও প্রাক্তন জেলা কংগ্রেস সভাপতি তরুণ রায়, দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রশাসক মন্ডলীর অন্যতম সদস্য ধর্মেন্দ্র যাদব, ‘আমরা পদাতিক’ নামক সংগঠনের প্রতিনিধি মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায়, দূর্বারের সদস্যা জ্যোৎস্না বসু, স্বশাসিত পরিচালন মন্ডলীর সদস্য লালবাবু প্রমুখ।