দুর্গাপুর, ১৬ জুলাই: চোরাপথে কম টাকায় নিয়োগ হচ্ছে।তাও কিনা আবার রাষ্ট্রায়াত্ত্ব দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায়? ঠিক শুনছেন। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় ধারাবাহিক এমন ঘটনায় ঘটছিল। সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশ কয়েকজন এই ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ করতেই ঝুলি থেকে বেরিয়ে এলো বিড়াল। মাত্র সাত আট হাজার টাকায় ঠিকাদারী সংস্থাগুলি চরম ঝুঁকিপূর্ণ যেকোনও কাজ করাচ্ছিল এই ঠিকা কর্মীদের দিয়ে।কিন্তু কিভাবে? রাষ্ট্রায়ত্ত এই কারখানায় বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে শাসক দলের ঠিকা শ্রমিক সংগঠনের “” শনির দশা””চলছে বলে অভিযোগ। আর সেই সুযোগে কি সংস্থাগুলি কার্যত জলের দরে শ্রম আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সস্তার শ্রমিক নিয়োগ করে নিজেদের উদর পূর্তি ঘটাচ্ছিলেন?আইএনটিটিইউসির কোর কমিটির সদস্য মানষ অধিকারী এই অভিযোগের কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, “”মাত্র সাত আট হাজার টাকার বিনিময়ে একজন ঠিকা কর্মীকে একটি নির্দিষ্ট সাইডে কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ করিয়ে দিয়ে সেই কর্মীকে বিভিন্ন সাইডে নিয়ে গিয়ে কাজ করানো হচ্ছিল।

এতে দুর্ঘটনা ঘটলে সেই শ্রমিকরা অথবা তাদের পরিবার কোন সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। শুধু তাই নয় clc এর আইন অনুসারে যে টাকা তাদের পাওয়ার কথা বা যে সুযোগ-সুবিধা তারা পাবেন তার থেকে সম্পূর্ণরূপে তারা বঞ্চিত।””কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এসব কিভাবে চলছিল মানসবাবু?তাহলে কি আপনাদের সিদ্ধান্ত যে পোর্টালের মাধ্যমে ঠিকা কর্মী নিয়োগ করতে হবে তা এখনো পর্যন্ত ফলপ্রসু না হওয়ার কারণেই এই ঠিকাদারি সংস্থাগুলি সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে? রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্গাপুরের শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন করে কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে। আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ১২ জনের সদস্য এই কোর কমিটিতে রয়েছেন।

কোর কমিটি প্রথম থেকেই কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, “”দুর্গাপুরের সরকারি ও বেসরকারি সমস্ত কলকারখানায় পোর্টালের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করা হবে।””কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এই কর্মী নিয়োগে দেখা গেল চূড়ান্ত বঞ্চনার এক জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি। যা কিনা সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট হওয়ার পর কোর কমিটির গোচরে আসে।এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সেই পোষ্টের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে দুর্গাপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় ঠিকা কর্মী নিয়োগে চূড়ান্ত অব্যবস্থা ও বঞ্চনার ঘটনার ছবি দেখে চক্ষু চড়ক গাছ শাসকদলের কোর কমিটির নেতাদের। অভিযোগ দিল্লির একটি ঠিকাদারি সংস্থার মাত্র সাত -আট হাজার টাকার বিনিময়ে clc এবং dlc র সমস্ত নিয়ম নীতিকে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে শুধু কর্মী নিয়োগ করেই ক্ষান্ত থাকেননি। অভিযোগ জলের দরে নিয়োগ হওয়া এই কর্মীদের যে সাইডে কাজ করার কথা সেখান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে অন্য সাইটে কাজ করানো হচ্ছিল। সুতরাং সেই সমস্ত সাইডে যদি কোন দুর্ঘটনার মুখোমুখি পড়তো ওই ঠিকা কর্মী তাহলে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকতো সেই কর্মী এবং তার পরিবার।

এখানেই শেষ নয় এই সমস্ত কর্মীদের নেই পিএফ, নেই ই এস আই এর সুবিধা।ওই ঠিকাদারি সংস্থা এই কর্মীদের দিয়ে সমস্ত কিছু কাজ করাতেন বল অভিযোগ তুলেছেন খোদ ঠিকা কর্মীরায়।কিন্তু এই চূড়ান্ত অব্যবস্থা কেন? অনেকেই অভিযোগ তুলছেন দুর্গাপুরের ঠিকা কর্মীরা ইউনিট কমিটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর কার্যত দিশা হারিয়ে ফেলেছেন।পোর্টালের মাধ্যমে নিয়োগ এর সুযোগ নিয়েই কি অবলীলায় ঠিকাদারি সংস্থাগুলি কম পয়সায় শ্রম আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এভাবেই কর্মী নিয়োগ করে চলেছেন কারখানায় কারখানায়? এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দুর্গাপুরে। মাত্র ৭-৮ হাজার টাকার বিনিময়ে ঠিকা কর্মীদের কাজ করানো হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ডিএসপি কারখানায়?কর্মীদের দেওয়া হচ্ছে না নিরাপত্তা বিষয়ক কোনও সামগ্রী। রাষ্ট্রায়ত্ত ডিএসপি কারখানায় এভাবে শ্রমিক শোষণ চলছে কতদিন? কেনই বা ঠিকাদারি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে গর্জে উঠবে না শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন? কেন এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক স্তরে লিখিত অভিযোগ করে এই সমস্ত ঠিকাদারি সংস্থাগুলিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে না? এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে দুর্গাপুরে। যদিও শাসকদলের ঠিকা শ্রমিক সংগঠন ২০১১ সালের পর থেকে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় এবং দুর্গাপুরের সমস্ত ছোট বড় কলকারখানা গুলিতে ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করে।কিন্তু বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলি এই চূড়ান্ত অব্যবস্থা দেখেও কি দেখেননি? নাকি বাস্তবে তারা ঠিকা শ্রমিক নিয়ন্ত্রণের ও নিয়োগের অধিকার নেই বলে তারা থিকা শ্রমিকদের প্রতি এই বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধাচারণ করে এতদিন পর্যন্ত কোনও আন্দোলন দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার বিরুদ্ধে সংগঠিত করেননি? বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলিকে কলকারখানায় আন্দোলন করতে দেখা যায়।

তাহলে এরকম একটি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তারপরেও বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলি চুপ কেন? শ্রমিক নগরী দুর্গাপুর এক সময় শ্রমিক আন্দোলনের পিঠস্থান হিসাবে পরিচিত। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি দাওয়া নিয়ে এই দুর্গাপুরে শ্রমিক আন্দোলনে বহু রক্ত ঝরেছে। কিন্তু আজ সবাই নিরব।নিজের নিজের সুবিধা আদায়ই যেন সংগঠনগুলির লক্ষ্য এমন অভিযোগ উঠছে। তাহলে কি শ্রমিক নগরী দুর্গাপুরের নতুন তকমা পেল এই যে, শ্রমিক শোষন নগরী দূর্গাপুর?এই প্রশ্নের উত্তর দেবেন তারাই, যারা শ্রমিকদের বঞ্চনা, শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে বড় বড় বুলি আওড়ান।।