পদযাত্রার মাঝেই জননেত্রীর কোলে নবজাতক

দুর্গাপুর, ৮ মে: বাস্তবে তিনি যে জননেত্রী তার স্পষ্ট প্রমান মিলল মঙ্গলবার দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজারের পদযাত্রায়। হাজার হাজার মানুষের স্রোত, তেরঙ্গা ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন, ব্যানারে আর মাইকে তারস্বরে ঘাসফুল শিবিরের নিজস্ব সংগীতের মূর্ছনা উৎসবের আমেজ এনে দিল দুর্গাপুরে মঙ্গলবার পড়ন্ত বেলায়। পাঁচমাথা মোড় পাশেই একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয় সোনালী রোদ যখন পশ্চিমের আকাশে ঢলে পড়েছে তখন চপারে করে নামলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পরিবেশ পরিস্থিতি আগে থেকেই যেন তৈরি ছিল। তিনি এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন হাজার হাজার মানুষের মন। দীর্ঘ প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ অবলীলায় হেঁটে চললেন “”বাংলার অগ্নিকন্যা “”।দুর্নীতির অভিযোগে আষ্টেপৃষ্ঠে চাপে পড়ে থাকা এরাজ্যের সরকারের প্রধান মুখ তার নিজস্ব স্টাইলেই কখনো হাতজোড় আবার কখনো ঊর্ধ্বে হাত তুলে অভিবাদন জানালেন সাধারণ মানুষকে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছবি যেটা ধরা পড়লো তা ছিল রাস্তার দুপাশে অগণিত মহিলাদের উপস্থিতি।

উল্লেখ্য বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের মোট প্রায় ১৮ লক্ষ ভোটারের মধ্যে মহিলা ভোটারের সংখ্যা প্রায় 50 শতাংশ।রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাদের দিকে মমতার নজর ছিল যে মমতাময়ী দৃষ্টিতে তার স্পষ্ট প্রমাণ যখন তিনি এক মায়ের কোলে নবজাতক কে দেখে এগিয়ে গেলেন তার কাছে। নবজাতককে কোলে তুলে কিছুক্ষণ আদর করলেন। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য বরাদ্দ করা নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে তিনি নিজেই চলে গেলেন মানুষের মাঝে। কখনো আবার ভিরিঙ্গি শ্মশান কালী মন্দিরের বাইরে দাঁড়িয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে ভক্তিপূর্ণ প্রণাম। কথা বললেন এই মন্দিরের সেবাইত সাধন রায়ের সাথে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এক পায়ে প্লাস্টার নিয়ে রাজ্যের সমস্ত বিধানসভায় চষে বেড়িয়ে মাস্টার স্ট্রোক দিয়েছিলেন তিনি। ২০২১ এ নবান্নে এবার বিজেপি এমন আওয়াজ উঠেছিল রাজ্যজুড়ে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৯৪ টা বিধানসভা কেন্দ্রে “”আমিই প্রার্থী “”এমন ডাক দেওয়ার পর রাজ্যের মানুষ দুহাত ভরে আশীর্বাদ করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীদের। বলাবাহুল্য তৃতীয়বারের জন্য নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি এ রাজ্যে ৪২ টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১৮ টি লোকসভা আসনে জয়লাভ করেছিলেন। ২০১৪ সালে যে বিজেপির সংসদ সংখ্যা ছিল এ রাজ্যে মাত্র দুজন, সেই বিজেপির এহেন সাফল্যে গেরুয়া শিবির ছাড়াও প্রায় সবার মনেই তৃণমূল কংগ্রেসের গেল গেল রব উঠেছিল ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে।কিন্তু সবকিছুকে ভুল প্রমাণ করে জননেত্রীর ক্যারিশ্মাতে ঘাসফুল ফুটেছিল রাজ্যের জেলায় জেলায়। এবারের ভারতীয় জনতা পার্টির নরেন্দ্র মোদি সরকারের সেকেন্ড মান ইন কম্যান্ড তথা দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ রাজ্যের ৪২ টি আসনের মধ্যে প্রথমে ৩৫ টি এবং পরে ৩০ টি আসনে বিজেপি প্রার্থীদের জয়ের কথা জানিয়েছেন। চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েকদিন আগে গলসি বিধানসভার বুদবুদে প্রচন্ড দাবদহের মাঝে ক্লান্ত শরীরে তিনি নিজেই মঞ্চে বলেছেন, “”শরীরের সমস্ত জল শুকিয়ে যাচ্ছে। লু লেগেছে। হেলিকপ্টার এর ভেতর যেন হিট চেম্বার। এর আগে ৮ মে এর মধ্যে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হয়ে যেত।এবার তা শেষ হবে ৪ জুন।এটাও বিজেপির একটা ষড়যন্ত্র। ঠিক আছে আরো একমাস না হয় প্রচার টেনে দেবো।””মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের যেন ওয়ান ম্যান আর্মি।তৃণমূলের বিরুদ্ধে একটি প্রবাদ ছিল এই “”দলে একটি পোস্ট, বাকি সব ল্যাম্পপোস্ট “”।রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের প্রথম থেকেই লড়াই আর আন্দোলন তাকে জননেত্রী করে তুলেছে।বাম সরকারের সময়কালে গ্রামে, গঞ্জে, শহরে, নগরে অন্যায় অবিচার হলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছুটে গেছেন মানুষের কাছে। আর এই রাজ্যের মানুষের কাছে চুপিসারে তিনি হয়ে উঠেছিলেন জননেত্রী। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম,নেতাই এর ঘটনা তার রাজনৈতিক জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।অনেকবার মমতার আন্দোলনকে শক্ত হাতে দমন করেছে বিগত বাম সরকার।১৯৯৩ সালের একুশে জুলাই তার জীবনের রাজনৈতিক আন্দোলনের এক বিরাট অধ্যায় বলা যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজও এ বঙ্গের রাজনীতিতে শুধু নয়, দেশের রাজনীতিতেও প্রাসঙ্গিক এক চরিত্র। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার জনপ্রিয় তাকে আগলে রেখেছেন মানুষের সাথে তার এই মিশে যাওয়ার প্রবণতাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচন তার জীবনের আরো একটা বড় পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার প্রচেষ্টাতে তিনি দিনরাত এক করেছেন। দীর্ঘ বেশ কয়েকদিন দুর্গাপুরে ঘাঁটি গেড়ে রাজ্যের জেলায় জেলায় ছুটে যাচ্ছেন ৪৬° তাপমাত্রাকে অবলীলায় হার মানিয়ে। ৬৯ বছর বয়সী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছুটে বাড়াচ্ছেন বাংলার উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম সমস্ত প্রান্তে। দুর্গাপুরের পদযাত্রায় হাঁটার মাঝে মানুষের দিকে তার দৃষ্টি আজও যে সজাগ তার অনেক প্রমাণ তিনি রেখে গেলেন।

Share it :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নিউজ হান্ট অফিসের ঠিকানা এবং যোগাযোগের বিবরণ