দুর্গাপুর, ১৯ জানুয়ারি : একটানা বৃষ্টির কারণে জলে ভেজা দুর্গাপুর স্টিল টাউনশিপ এর দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার নিজস্ব নেহেরু স্টেডিয়ামকে নরেন্দ্র মোদির জনসভার জন্য উপযুক্ত করে তুলতে গিয়ে গোটা মাঠ বেহাল হয়ে পড়ে।মাঠের কাদা সরাতে ও মোদীর জোড়া সভার নির্মাণকার্য চালাতে গিয়ে জেসিবি মেশিন চালাতে হয়। আর তার যদি স্টেডিয়ামের ঘাসের সবুজ গালিচা একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। মোদির জনসভার পরদিন সেই মাঠেই ধান গাছ পুঁতে প্রতীকী প্রতিবাদ করতে দেখা গেল পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সহ তৃণমূলের অন্যান্য নেতাকর্মীদের। নেহেরু স্টেডিয়ামের আ্যথলিটের জন্য যে সিন্থেটিক ট্র্যাক ছিল তা নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে সেখানেই ধান গাছে চারা পুঁতে নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন,””ধ্বংসের প্রতীক এসে তছনছ করে দিলেন দুর্গাপুরের মানুষের কাছে গর্বের মাঠ নেহেরু স্টেডিয়ামকে।মাঠের যা অবস্থা তাতে করে আগামী দুবছর সময় লাগবে এই মাঠকে খেলার উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে।””পালটা সেইসময় মাঠে উপস্থিত বিজেপি নেতা জীতেন চট্টোপাধ্যায় নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর উদ্দেশ্যে বললেন,””কেন্দ্রীয় সংস্থার মাঠ তাই তাদেরকে বলে এই মাঠ আমরা ঠিক করিয়ে দেব।

“”দুর্গাপুর বাসীর কাছে অত্যন্ত গর্বের স্টিল টাউনশীপের নেহেরু স্টেডিয়ামে নরেন্দ্র মোদীর জোড়া কর্মসুচীর জেরে গোটা মাঠ জূড়ে তৈরি হয় মঞ্চ। আর লাগাতার বৃষ্টির সময়ে যেভাবে গোটা মাঠ জুড়ে জেসিপি নামক যন্ত্রদানব দাপিয়ে বেড়ালো তাতে করে একেবারেই শেষ হল এই মাঠের প্রাকৃতিক সবুজ ঘাসের গালিচা।রাষ্ট্রায়ত্ত দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কর্তৃপক্ষ কি এই মাঠকে পুনরায় আবার তার পুরানো জায়গাতে ফেরাতে পারবেন? আর তা যদি হয় তাহলেও মাঠের সেই সবুজ ঘাসের গালিচা ফেরাতে লাগবে দীর্ঘ সময়।আর ততদিন দুর্গাপুরের যারা ক্রীড়াবিদ এবং ডিএসিপি র যারা কর্মী ও তাদের পরিবারের লোকেরা এই গৌরবময় স্টেডিয়ামে খেলাধূলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকবেন।উল্লেখ্য এই স্টেডিয়ামের সাথে বহু গৌরবময় ইতিহাস জড়িয়ে আছে।একসময় এই স্টেডিয়ামে ইন্টার স্টিলের বড় বড় খেলাধুলার আয়োজনে দেশের বহু বড় বড় ক্রীড়াবিদ তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন।এই স্টেডিয়ামেই ১৯৮৩ র বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় ক্রিকেট দলের বহু তারকা যেমন কপিলদেব,সুনীল গাভাস্কর,রবি শাস্ত্রীদের মত খেলোয়াড়দের খেলা দেখতে হাজার হাজার মানুষ এসেছিলেন।ইন্টার স্টিলের ক্রিকেট খেলায় মনিন্দর সিং,বিবেক রাজদানের মত ক্রিকেটের মহাতারকাদের এই স্টেডিয়ামেই খেলতে দেখা গিয়েছিল।এই মাঠে যেভাবে এই বৃষ্টিতে জেসিবি চালিয়ে গোটা মাঠজুড়ে মঞ্চ তৈরি করা হল তাতে করে ক্রীড়ামোদীদের একাংশের অভিযোগ এই মাঠ শেষ হয়ে গেল।

অন্তত ২ বছর লাগবে মাঠের সেই সবুজ গালিচা ফিরে পাওয়ার জন্য বলে অভিযোগ রাজ্যের শাসক দলের ।এই মাঠেই প্র্যাকটিস করা বহু খেলোয়াড় বিভিন্ন খেলাধুলায় নিজেদের প্রতিভার ছাপ রেখে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও মিশ্র ইস্পাত কারখানা ছাড়াও রেলে,ভেইলে খেলোয়াড়দের কোটাতে চাকরিও পেয়েছেন। গোটা মাঠের ঘাস ছুলে ফেলতে হয় কাদা সরাতে।তারপরে লোহার পাত চাপা দিতে হয় জনসভায় উপস্থিত মানুষদের দাঁড়ানো ও বসার জন্য।যত্রতত্র যেভাবে খুশি জেসিবি চালানোর কারনে সেই মাঠ এখন চড়াই-উতরাই অবস্থায় দাঁড়িয়ে। বিজেপি বিরোধী প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি মাঠের এই দুর্দশার বিরোধিতা করছেন একযোগে। অনেকেই বলছেন নেহেরু স্টেডিয়ামকে এন ডি এ পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার নবরুপে গড়ার জন্য একটাকাও দেয়নি, অথচ এই ময়দানেই ক্ষমতাবলে দুবার নরেন্দ্র মোদীর জনসভা হয়ে গেল।মাঠের এই দুরাবস্থা এবং আগামী প্রজন্মের খেলাধুলার উপযোগী হিসাবে এই মাঠ কারা নতুন করে গড়বেন?ক্রীড়াবিদদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দুর্গাপুরের নেহেরু স্টেডিয়ামে এভাবে যাতে জনসভা করতে কোনও রাজনৈতিক দলকেই না দেওয়া হয় তার জন্য লিখিত অভিযোগ পত্র দেওয়ার কথাও জানিয়েছে।

“পশ্চিম বর্ধমানের টিএমসি সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, “” গড়তে তো আসেননি।নষ্ট করতেই এসেছিলেন ।তাই এটাই তো স্বাভাবিক। তবে ক্রীড়াবিদদের আবেগকে আমরা সম্মান দিতে জানি।তাই এই মাঠে ধানের গাছ উঠে আমরা প্রতি কি প্রতিবাদ করলাম।মাঠ দ্রুত সংস্কার করে খেলার উপযোগী করানো এবং আগামী দিনে কোনও রাজনৈতিক দলকে যাতে করে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কর্তৃপক্ষ মাঠ ব্যবহার করতে না দেন সেই মর্মে আমরা ডিএসপির নগর প্রশাসন ভবন ঘেরাও করে আন্দোলন করবো এবং স্মারকলিপি জমা দেবো।

কারন দুর্গাপুরে প্রচুর ময়দান ছিল।বিভিন্ন জেলা এমনকি ভিন রাজ্য থেকে ২০ হাজার লোক ঢুকিয়ে মাঠ ভর্তি দেখাতেই এই স্টেডিয়ামকে ব্যবহার করা হল।””জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ দত্ত তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে কটাক্ষ করে বলেন, “”নরেন বাবু দিদির গুড বুকে থাকার জন্য নাটক করে গেলেন। এখনো স্টেডিয়ামের কাঠামো খোলা হয়নি। মাঠ নিয়ে উনাকে ভাবতে হবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা তারাই মাঠ ঠিক করে দেবে।নরেন বাবুকে বলুন তার বিধানসভা এলাকায় বহু রাস্তায় পুকুর হয়ে আছে। সেখানে গিয়ে তিনি ধান পুতুন।””