দুর্গাপুর,১১ ডিসেম্বর : শীতের আমেজ সবেমাত্র দেখা দিয়েছে বঙ্গজীবনে।সেই প্রেক্ষাপটে কুয়াশার চাদর মোড়া শিল্প শহরে দ্বিতীয় বর্ষের দুর্গাপুর উৎসব শুরু হয় গত ৬ ডিসেম্বর। কিন্তু প্রদীপের নিচেই যেন অন্ধকার। মঞ্চে হাজার হাজার ওয়াটের নীল, লাল, সবুজ, হলুদ আলোর ঝলকানির মাঝে কুনাল গঞ্জাওয়ালা থেকে কুনাল গাঞ্জাওয়ালা থেকে যশশ্বী সংগীতশিল্পী হরিহরণ, অস্কার নমিনেটেড ইমন চক্রবর্তী থেকে আধুনিক লোকগানের লাল মাটির রাঙ্গা মেয়ে অর্পিতা চক্রবর্তীরা মঞ্চ মাতাচ্ছেন ঠিক তখন তারই ঢিল ছোড়া দূরত্বে উৎসবের আঙিনায় আসা মেলার দোকানদারেরা খরিদ্দারের অভাবে পেটে গামছা বেঁধে বসে আছেন। বুধবার পরিস্থিতি এমন জায়গায় দাঁড়ায় যে ক্রেতার অভাবে সন্ধ্যা থেকে দোকানপাট বন্ধ করে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা চুপ করে বসে আছেন কাল কি খাবেন তার চিন্তায়।দুর্গাপুর উৎসব নামক সাংস্কৃতিক এই মেলায় মোটা টাকার বিনিময়ে ব্যবসা করতে এসেছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা। এখানে দোকানপাট বসানোর জন্য উদ্যোক্তাদের দিতে হয়েছে জমির ভাড়া তার পাশাপাশি মোটা অংকের বৈদ্যুতিক বিলের টাকা। সবমিলিয়ে প্রতিদিন যা খরচ হচ্ছে এই ব্যবসায়ীদের তার সিকিভাগও উঠে আসছে না বিক্রি বাটা থেকে। বারাসাত থেকে এসেছেন ব্যবসায়ী অনিল সাহা। বহু আশা নিয়ে তিনি দুর্গাপুর উৎসবে দোকান লাগিয়েছিলেন। কিন্তু গত পাঁচ দিনের ক্রেতাদের অভাবে তিনি এবং তার মত অসংখ্য দোকানদাররা ভুগছেন। অসহায় অনিলবাবু জানালেন “”কাল কি খাব আমি জানিনা। আমার কাছে সেই টাকাও নেই। উৎসবে সবাই গান শুনছেন চলে যাচ্ছেন। আমাদের এক্কেবারে বিক্রি নেই। বুধবার আবার কোনও বড় শিল্পীর প্রোগ্রাম নেই বলে মেলাময়দান একেবারে শূন্য। “”বুধবার সন্ধ্যা থেকেই দুর্গাপুর উৎসব প্রাঙ্গণের সিংহভাগ দোকানপাট বন্ধ। মেদিনীপুরের দীঘা থেকে এসেছেন চন্দন জানা। তারা চারজন এসেছেন দোকান নিয়ে। তাদেরও খাবারের খরচ জুটছে না আর। বাধ্য হয়ে তারা মাঝ পথেই তাই মেলাতে দোকানপাট গুটিয়ে নিয়ে বাড়ি চলে যেতে চাইছেন। কোটি কোটি টাকা বাজেটের দুর্গাপুর উৎসব। উদ্যোক্তা দুর্গাপুর বণিক সভা। মেলার দায়িত্বে আছেন যারা তারা জায়গার ভাড়া হিসেবে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন। তারপর আবার বৈদ্যুতিক সংযোগ দিতেও লেগেছে মোটা টাকা। ক্রেতার অভাবে ধুঁকছে দুর্গাপুর উৎসবের মেলা প্রাঙ্গণের অভাবি দোকানদারেরা। দিশেহারা তারা। মাঝপথে চলে যেতে চাইছেন বাড়ি। একদিকে উৎসব মঞ্চে রঙিন আলোর ঝলকানি ঠিক তার উল্টোদিকেই অসহায় অভাবী এই ব্যবসায়ীবৃন্দের কাতর আকুতি। তারা চাইছেন উদ্যোক্তারা জমি ভাড়া বাবদ যে টাকা দাবি করেছেন তা কমিয়ে দেওয়া হোক। দুর্গাপুর উৎসব নিয়ে পরিকল্পনার অভাব প্রথম থেকেই লক্ষণীয়। এবার দুর্গাপুর উৎসবের আয়োজনে প্রায় সমস্ত জায়গাতেই যেন ফাঁক ফোকর থেকে গেছে। সেই কারণে দু একজনের কাঁধে গুরু দায়িত্ব পড়ে গেলেও তারা পালন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। দুর্গাপুরের বি-জোনের সিপিএম থেকে বিতাড়িত “”গায়ে মানে না আপনি মোড়ল “”গত বিধানসভা নির্বাচনেও যিনি দুর্গাপুর পূর্বের বিজেপি প্রার্থী কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরীর হয়ে গলা ফাটিয়েছিলেন। নিজের কয়েকজন ষন্ডা গুন্ডাকে নিয়ে নেমে পড়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তথা বর্তমান মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারকে হারানোর জন্য। তিনিই এখন হঠাৎ করে জার্সি বদল করে সিপিআই(এম) টু বিজেপি টু তৃণমূল কংগ্রেসে ভীড়ে এই উৎসবে “” জমিদারি””চালালেন। অত্যন্ত মিষ্টভাষী এই”” রাজনৈতিক বহুরূপী “”নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বারবার রাজনৈতিক দলগুলিকে ব্যবহার করেছেন এটা সর্বজনবিদিত। কখনও তিনি সুভাষ চক্রবর্তীর কাছের লোক, আবার কখনও তিনি কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরীর কাছের লোক আর বর্তমানে তিনি মন্ত্রি প্রদীপ মজুমদার এলেই ঘাড় নুইয়ে যেন তার অত্যন্ত অনুগত শিষ্য।আসলে তিনি কারোরই লোক নন। তিনি দুর্গাপুরের সবচেয়ে বড় “”ধান্দাবাজ””।আর এমন মানুষদেরকেই মাথায় নিয়েই উৎসব কমিটি চালাতে গিয়ে আজ উৎসবের এমন দৈনদশা। নিজেদের কায়েমী স্বার্থ বজায় রাখতে গিয়ে এরা আজ তৃণমূলের অন্দরেই অতি সন্তর্পনে ফাটল ধরিয়ে দিয়েছেন।আগামী দিন হয়ত এই সত্য স্পষ্ট হবে। তবে তাতে এই রাজনৈতিক মুখোশধারীর খুব একটা ক্ষতি হবে না। কারণ ক্ষমতায় যারাই আসবেন তিনি তাদেরকে তৈলমর্দন করে ঠিক নিজের জমিদারিত্ব ফলিয়ে যাবেন। আর এইসব মানুষদের আস্ফালনের কারণেই আজ উৎসবের ঘনঘটার মাঝে মেলাতে আসা দোকানদারেরা দোকানপাট বন্ধ করে লাইটের অর্থ জোগাতে না পেরে অন্ধকারে মুখ লুকিয়ে কাল কি খাবেন এটা ভেবে কাঁদছেন।