দুর্গাপুর, ১৮ মার্চ: সন্ধ্যা নামলেই জ্বলছে জঙ্গল। প্রাণ সংশয়ের মুখে বন্যপ্রাণ। জঙ্গলের দগ্ধ চেহারা দেখে ‘জঙ্গলে আগুন লাগানো মহাপাপ’ লেখা পোস্টার সাইকেলে লাগিয়ে বেরিয়ে পড়লেন এক পরিবেশপ্রেমী। নাম তাঁর অশোক রায়। বয়স ৭০ পেরিয়েছে। তবুও থেমে নেই জঙ্গল বাঁচানোর তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা। তাঁর ভূমিকাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে সমাজের সব মহল।পাতা ঝরার মরশুমে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের জঙ্গল দাবানলের মত জ্বলছে। মৃত্যুর মুখে পড়তে হচ্ছে জীবজন্তুদের। কারা আগুন লাগাচ্ছে তাদের সন্ধান পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বনদপ্তরকে। কাঁকসার গড় জঙ্গলেও দেখা যাচ্ছে একই চিত্র। গড় জঙ্গলে রয়েছে কয়েকশো ময়ূর, বেশ কিছু নীলগাই, সজারু, হায়না নেকড়ে সহ বিরল প্রজাতির বহু জীবজন্তু। ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে সেই সব বন্যপ্রাণীদের। জঙ্গলে আগুন রুখতে কাঁকসার মলানদিঘীর আকন্দারা গ্রামের অশোক রায় সাইকেল নিয়ে ঘুরছেন জঙ্গলমহলের এলাকায় এলাকায়।
সাইকেলের সামনে লেখা রয়েছে ‘জঙ্গলে আগুন লাগানো মহাপাপ’, পিছনে লেখা রয়েছে ‘হরিণ, নেকড়ে শিয়াল নীলগাই, ময়ূরদের রক্ষা করতে জঙ্গলে আগুন লাগাবেন না’, আর মাঝখানে ঝুলছে একটি গাছ ‘একটি প্রাণ লেখা পোস্টার’। তিনি এভাবেই সাইকেল চালিয়ে বার্তা দিচ্ছেন পরিবেশ বাঁচানোর। জঙ্গলে আগুন লাগলে তৎক্ষণাৎ বনদপ্তরের আধিকারিকদের জানানোরও বার্তা দিচ্ছেন। অশোকবাবু বলেন,”আমি এখনো পর্যন্ত ৫হাজার গাছ লাগিয়েছি। পাখিদের কথা ভেবেই শুধুই দেশীয় গাছ লাগিয়েছি। প্রতিবছর জঙ্গলে তো আগুন লাগেই। ক্ষতির মুখে পড়ে বন্য জীবজন্তরা। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার মানুষদেরও সমস্যার মুখে পড়তে হয়। মাঝেমধ্যে জঙ্গলের আগুন থেকে তাদের গ্রামেও আগুন ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। গত বছর আমার লাগানো ১০০আমগাছও জ্বলে গেছিল। তাই এই বছর আমি সাইকেল নিয়েই সচেতন করতে বেরিয়েছি।

সকল মানুষকে বোঝাচ্ছি। কাউকে আগুন লাগাতে দেখতে পেলে তাকে ধরে বনদপ্তরে খবর দেওয়ার বার্তা দিচ্ছি। আমার লক্ষ রয়েছে গোটা জঙ্গল মহল জুড়ে এই সচেতনতা করার।” এক মহিলা বুদি হাঁসদা বলেন,”জঙ্গলে আগুন লাগলে ভয় তো লাগেই। আমাদের জীবিকারও ক্ষতি হচ্ছে। থালা পাতা তৈরির জন্য শাল পাতা তুলতে জঙ্গলে যেতে পারছি না। বহিরাগতরা আগুন লাগিয়ে দেয় জঙ্গলে। রাত বিরেতে আগুনের তীব্রতা এত থাকে যে গ্রাম থেকে বাইরে বেরোনো যায় না। তবে অশোকবাবু যেভাবে সচেতনতা করছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়।”