দুর্গাপুর, ৯ মার্চ: লড়াই যেন থামতেই চাইছেনা,শাসকদলের গৃহ কোন্দল এখন এখন বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের কাছে এবং শহর দুর্গাপুরে জোড়া ফুল শিবিরের কাছেও মুখরোচক গল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়াল এবং অন্যদিকে অভিজিৎ ঘটক এবং তার অনুগামীরা। কয়েকদিন আগে দুর্গাপুরের বেসরকারি পিসিবিএল কারখানার সামনে মাইক বেঁধে বিশ্বনাথ পাড়িয়াল তোপ দেখেছিলেন দলের একাংশের বিরুদ্ধে। এবার সেই কারখানার গেটের বাইরেই পাল্টা মাইক বেঁধে বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের নাম না করে প্রকাশ্য সভায় তাকে তুলোধোনা করলেন তার দলেরই আরও এক শ্রমিক নেতা তথা দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রশাসক মন্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দীপঙ্কর লাহা। আর সেই ভাই ভিডিওই এখন ভাইরাল শহর জুড়ে। যদিও চলতি মাসের ৬ তারিখে এই দীপঙ্কর লাহাদের উপস্থিতিতেই পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন দলের মুখপাত্ররা ছাড়া আর কেও সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলবেন না। কিন্তু তারপরেও তৃণমূলের গৃহযুদ্ধ যে থামেনি এই ঘটনা যেন তারই প্রমাণ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলা সফরে এসে একদিন রাত্রিযাপন করেন দুর্গাপুরে।সেইদিন দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিম বর্ধমান জেলার সংগঠনের সিনিয়ার নেতাদের ডেকে বৈঠক করে জেলার ৯ টি বিধানসভা ভিত্তিক এলাকায় লোকসভা নির্বাচনে যাতে শাসকদলের প্রার্থীরা সেই বিধানসভা থেকে ভালো মার্জিনে লিড পান সেই দায়ীত্ম ভাগ করে দিয়ে যান।বিতর্ক দানা বাঁধে দলে বেশ কিছুদিন “” কোনঠাসা””থাকা বিশ্বনাথ পাড়িয়ালকে দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে দায়িত্ব দেওয়াকে কেন্দ্র করেই।এরপর দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের একটি কারখানার গেটের বাইরে মিটিং করেন আইএনটিটিইউসি’র পশ্চিম বর্ধমানের জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটক। বিশ্বনাথ পাড়িয়াল অভিযোগ তোলেন সেই সভায় তাকে ডাকা হয়নি। এরপরেই একটা ঠান্ডা,লড়াই শুরু হয়ে যায় বিশ্বনাথ পাড়িয়াল ও অভিজিৎ ঘটক এবং তাদের অনুগামীদের মধ্যে।সংবাদমাধ্যমের সামনে এই দুই গোষ্ঠীর নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে “” কাদা ছোড়াছুড়ি “” শুরু করে দিতেই বিরোধী শিবির শাসকদলের এই দ্বন্দ্বকে নিয়ে কটাক্ষ শুরু করে।দলের নেতাদের কাকে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি থামাতে পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী পশ্চিম বর্ধমান জেলার তৃণমূল নেতাদের এবং কর্মীদের সামনে সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দেন “”দলনেত্রী সবাইকে এক হয়ে কাজ করা নির্দেশ দিয়ে গেছেন। কাউকে আলাদা করে জমিদারি দিয়ে যাননি। “”এরপরেই জেলা সভাপতি কড়াবার্তা দিয়ে বলেন, “”সংবাদ মাধ্যমের সামনে চায়ের দোকানে কোন মন্তব্য দলের যে কেউ করতে যাবেন না। জেলা কমিটির বৈঠকে কারা কারা মুখপাত্র তাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।তার বাইরে যদি কেউ কোনও মন্তব্য করতে যান তাকে কিন্তু শো-কজ করা হবে। “”কিন্তু তারপরেও থামলো না ঘাসফুল শিবিরের অর্ন্তকলহ। এবার পিসিবিএল কারখানার গেটের বাইরে জনগর্জন সভার প্রস্তুতি সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে শ্রমিক নেতা দীপঙ্কর লাহা প্রথমে আক্রমণ করেন সিপিআইএম নেতা “”পঙ্কজবাবু””কে।তারপরেই দীপঙ্কর লাহা নাম না করে তুলোধোনা করেন বিশ্বনাথ পাড়িয়াল কে। সেই ভিডিও এখন ভাইরাল শহরজুড়ে। দীপঙ্কর লাহা বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন “”সিপিএমের নেতা পঙ্কজবাবু শ্রমিকদের কাছে তৃণমূল নেতাদের কাটমানি খাওয়ার অভিযোগ করছেন , কদিন আগে গলায় লাল উত্তরীয় পরে তার সাথে মিছিল করেছেন।কদিন আগে আপনাদের এক প্রাক্তন বন্ধু এই পিসিবিএল কারখানার গেটের বাইরে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছেন দিদি নাকি তাকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। খুব ভালো কথা। সেই দায়িত্ব পালন করুন। কিন্তু আপনাকে তো বলে যাননি যে pcbl কারখানার গেটে যান? আইএনটিটিইউসির দায়িত্ব তোকে দিলাম? কেন মিথ্যা প্রচার করে যাচ্ছেন? আপনাকে কি আইএনটিটিইসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নাকি, যে আপনি কারখানার গেটেই মিটিং করতে এসেছেন? আপনি একাই পারেন নাকি দলের উচ্চ স্তরে অভিযোগ জানাতে? আমরা কি জানি না? আপনার বিরুদ্ধেও দলের উচ্চ স্তরে খবর পাঠাচ্ছি । “” এরপরেই সুর আরও চড়িয়ে দীপঙ্কর লাহা তার বক্তব্যে বলেন, “”দল দায়িত্ব দেওয়ার পর আপনি কারখানার গেটে আসছেন? খুব মধু না? পিসিবিএল থেকে কি মধু পেয়েছিলেন? “”এরপরেই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন দীপঙ্কর লাহা, “”এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বেশি মুখ খুলবো না। কিন্তু সঞ্জীব গোয়েঙ্কার মাধ্যমে আইসিআইসিআই না কোন ব্যাংকে চেক যেত আমরা সেই ঘটনার কথা জানি।চোর,চোরের মায়ের আবার বড় বড় গলা। অপদার্থ নেতা। আপনি অভিজিৎ ঘটক এর সমালোচনা করছেন ? “”এই ভিডিও এখন ভাইরাল। শাসক দলের এই গৃহযুদ্ধে মুখরোচক গল্প ছড়াচ্ছে শহর জুড়ে। আর শাসকদলের নেতাদের এই লড়াইয়ে লোকসভা নির্বাচনের আগে বাড়তি বল পাচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক শিবির গুলি। তারাও তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন শাসকদলের শহর দুর্গাপুরের সেনাপতিদের নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি দেখে।।যদিও দীপঙ্কর লাহা এবং বিশ্বনাথ পাড়িয়াল এর সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তারা কেও ফোন ধরেননি।তাই তাদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।