দুর্গাপুর, ২৯ ফেব্রুয়ারী : দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা শ্রমিকদের কাছে “”আতঙ্কের কালখানা”” তে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর নিয়ম করে বড় বড় দুর্ঘটনা। আর তার জেরে অসহায় শ্রমিকদের হয় প্রাণ যাচ্ছে নতুবা আহত অবস্থায় স্বাভাবিক জীবন থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছেন। কারখানার দীর্ঘদিন আধুনিকীকরণ নেই , ঝুঁকিপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রগুলিতে নিয়মিত দেখভালের অভাবের অভিযোগও উঠছে। কিন্তু ওই যে, দুর্ঘটনা ঘটলেই বলে দেওয়া হচ্ছে, “”তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে “”। এখন ঘড়ির কাঁটায় আটটা ত্রিশ। তখনই শ্রমিকদের চিৎকার শুরু হয়। মুহূর্তে ঝলসে যায় এক আধিকারিক সহ পাঁচ কর্মী। হইচই পড়ে যায় ইস্পাত কারখানা জুড়ে। ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ইস্পাত কারখানার দ্রুত উদ্ধারকারী দল সহ দমকল বাহিনী। পাঁচজনকেই উদ্ধার করে তড়িঘড়ি দুর্গাপুর ইস্পাত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় স্থানান্তর করা হয় বিধান নগরের একটি বেসরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। খবর পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছান দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার ডাইরেক্টর ইনচার্জ বিজেন্দ্র প্রতাপ সিং চিপ জেনারেল ম্যানেজিং বিকাশ মানবাটি সহ দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বরা। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার বেসিক অক্সিজেন ফার্নেস বিভাগে গলিত লোহার সাথে বিভিন্ন সামগ্রী মিশিয়ে কনভার্টারে ইস্পাত তৈরীর কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। সেই কনভার্টার ফুটো হয়ে জল বের হতে থাকে। তখনই গলিত লোহা ছিটকে যায়। গলিত লোহা ছিটকে গুরুতর আহত হন ওই বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার পৃথ্বীরাজ রায় দুজন স্থায়ী শ্রমিক সোমনাথ ঘোষ দুজন প্রশিক্ষণরত শ্রমিক সর্বজিত ঢাঙ্গর ও বিনয় কুমার হরিজন এবং একজন অস্থায়ী শ্রমিক চিত্তরঞ্জন মন্ডল। তাদের তড়িঘড়ি র দুর্গাপুর ইস্পাত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পৃথ্বীরাজ রায়, বিনয় কুমার হরিজন এবং সর্বজিত ঢাঙ্গরকে বিধান নগরের বেসরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কংগ্রেস শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি রজত দীক্ষিত দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার নিরাপত্তার গাফিলতির অভিযোগ তুলে বলেন,”শ্রমিকরা সঠিক নিরাপত্তা পাচ্ছেন না। প্রশিক্ষণরত শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। সেজন্যই ঘটছে এই ধরনের ঘটনা। দ্রুত তদন্তের দাবিও তুলেছেন তারা।” দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার তৃণমূল ঠিকা শ্রমিক সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন,”দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। তবে নিরাপত্তা বাড়ানোর দরকার। শ্রমিকদের সঠিক নিরাপত্তার জন্য তারা একাধিকবার ইসপাত কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে দাবিও তুলেছেন। শ্রমিকদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।”দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার চিপ জেনারেল ম্যানেজার বিকাশ মানবাটি বলেন, “তিনি খবর পেয়েছেন দুর্ঘটনা হয়েছে। সেই খবর পেয়েই ইস্পাত হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছেন।”