দুর্গাপুর, ২৫ জানুয়ারি : দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীদের সামনে রেখেই একদিন দুর্গাপুরে তৈরি হয়েছিল দুর্গাপুর পিপলস কো-অপারেটিভ ব্যাংক। এই সমবায় ব্যাংকেই দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা স্থায়ী ও ঠিকা কর্মীদের ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করে সেখানেই তাদেরকে বেতন দেওয়া চালু হয়েছিল। বিগত বাম সরকারের সময়কালে দুর্গাপুর পিপলস কো-অপারেটিভ ব্যাংক এশিয়ার সমবায় ব্যাংকগুলির মধ্যে গর্বের এক প্রতিষ্ঠান হিসাবে আত্ম প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শ্রমিকদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে সক্ষম হয় এই সমবায় ব্যাংক। কিন্তু কালের প্রবাহে এই ব্যাংক পরিচালন সমিতিতে আসে পরিবর্তন। উঠে আসে দুর্নীতির নানান অভিযোগ। শুধু তাই নয় দুর্গাপুর পিপলস কো-অপারেটিভ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিষেবা যেগুলো একের পর এক মুখ থুবড়ে পড়তে থাকে এমন অভিযোগে উঠে আসে। দীর্ঘ প্রায় আট বছর যাবত এই ব্যাংকে কোন নির্বাচন হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই এখন এই ব্যাংক পরিচালনার দায়ভার বোর্ডের হাতে। শনিবার সাতসকালে রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী তথা দুর্গাপুর পূর্বের বিধায়ক প্রদীপ মজুমদার এই সমবায় ব্যাংকের ম্যানেজার এবং অন্যান্য আধিকারিক এবং ব্যাংক কর্মীদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করলেন। আট বছর আগে যে নির্বাচন হয়েছে আবার পুনরায় যাতে নির্বাচন হয়,সুষ্ঠু পরিচালক মন্ডলী গঠনের ব্যাপারেও নিজের মত প্রকাশ করেন মন্ত্রী বলে সূত্র মারফদ জানা যায়। এই সমবায় ব্যাংকের দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন গ্রাহকরা। সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে গিয়ে বর্তমান ব্যাংক পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক অশোক কুমার মন্ডল জানান, “”এই আর্থিক লেনদেনের প্রতিষ্ঠানে কোনরকম দুর্নীতি বরদাস্ত করা যাবে না এমন নির্দেশিকা দিয়েছেন আজ মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। যে অভিযোগ দুর্নীতির উঠেছে তার জন্য শক্তিশালী একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই ব্যাংক যাতে আগামী দিনে তার হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারে তার জন্য দ্রুত এই ব্যাংকে নির্বাচন সহ বিভিন্ন বিষয়ে মন্ত্রী আলোচনা করেছেন। আজ ব্যাংকের সমস্ত কর্মীরা অত্যন্ত আনন্দিত মন্ত্রীর সাথে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে আলোচনার পরে। আমরা আশাবাদী ব্যাংকের যে সমস্ত পরিষেবাগুলি থেকে গ্রাহকরা বঞ্চিত হয়ে আছেন সেগুলিও দ্রুত চালু করা যাবে।

“”মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের সাথে আলোচনায় সামিল হয়েছিলেন দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও। শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন দাবির কথা মন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে অতি দ্রুত এই সমবায় ব্যাংকের পরিচালকমন্ডলী গঠনের জন্য নির্বাচন সম্পন্ন করার দাবী জানানো হয় মন্ত্রীকে বলে জানালেন শ্রমিক সংগঠনের এক প্রতিনিধি। সমবায় ব্যাংকে দাঁড়িয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোন দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, “”সমবায় ব্যাংকের পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বশাসন এবং স্বনির্ভরতা এই দুটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সমবায় ব্যাংকের ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা থাকলেও স্বশাসন এখন নেই। তাই এই সমবায়ের দ্রুত নির্বাচন আমরা করাবো। যা কিছু অভিযোগ আছে তা আমি শুনলাম। সেই সমস্যাগুলির অতি দ্রুত সমাধানের প্রচেষ্টা চালাবো আমরা। “”তাহলে কি দুর্গাপুর পিপলস কো-অপারেটিভ ব্যাংকের দুর্নীতির সাথে জড়িত যারা তাদের শাস্তি অবশ্যম্ভাবী? গ্রাহকরা কি দুশ্চিন্তার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন? দুর্গাপুর পিপলস কোঅপারেটিভ ব্যাংক আবার কি তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে কবে এই সমবায় ব্যাংকের নির্বাচন হবে এবং একটি স্বচ্ছ পরিচালকমন্ডলী তৈরি হবে তার উপরে।।