দুর্গাপুর, ১৯ অগাস্ট : ওঁরা ব্রাত্যজন।সামাজিক চেতনায় জারিত ওঁদের অন্তঃস্থল থেকে চুঁইয়ে পড়া স্নেহ ফল্গুধারার সন্ধান হয়তো অনেকেই পাননা । তবে ব্যতিক্রমী কোন কোন ব্যক্তি যখন ওঁদের হৃদয় উৎসারিত বাৎসল্য প্রেমের স্বর্গীয় অনুভূতিতে জারিত হন, তখনই সেই ব্রাত্যজনেদের রুদ্ধ সঙ্গীত খুঁজে পায় সুর, লয়, ছন্দ। আজ পবিত্র রাখি বন্ধনের পুন্যলগ্নে সেই সুরেরই যেন অনুরণন শোনা গেল দুর্গাপুরের নিষিদ্ধপল্লীর ইঁট,কাঠ,পাথরের খঞ্জর থেকে।এ পল্লীর ভাঙ্গা পথের রাঙ্গা ধুলোয় যেন মিশে গেল ভালোবাসার পরশ মাখা এক অন্য পৃথিবী।

কাদা রোড পল্লীর যৌনকর্মীরাও যে রক্তমাংসের মানুষ, তাঁদের হৃদয়ে ঘুমিয়ে থাকা ভগিনীরাও আজ রাখি বন্ধনের আলোয় আলোকিত হতে চেয়েছেন। তাইতো ওঁদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এক মনোরম সকাল কাটানোর আকুতি নিয়ে পল্লীদ্বারে ছুটে এসেছেন দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রশাসক মন্ডলীর চেয়ারপার্সন অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়, কংগ্রেস নেতা তরুণ রায় সহ বেশ কয়েকজন।পরম প্রীতিভরে তরুণ রায়ের হাতে রাখি বেঁধে ভাই বোনের সম্পর্ককে চির শাশ্বত করে রাখার সংকল্প নেন অনিন্দিতা দেবী।একই সঙ্গে এ পল্লীর সকল ভাইবোনের হাতে রাখি বেঁধে দেন শহরের সকলের রাজনীতির দিদি। নিষিদ্ধ পল্লীর বাসিন্দাদের পরমাদরে বুকে জড়িয়ে ধরলেন তিনি।পরস্পর মুখ মিষ্টির পর্বেও ঝ’রে পড়ল অকৃত্রিম সৌভ্রাতৃত্বের রঙীন বর্ণমালা। এই পবিত্র অনুষ্ঠানে অনিন্দিতা দেবীর হাত থেকে রাখি বাঁধার পর তাঁর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় তরুণ বাবু বলেন,’রাজনীতির রং আর ভোটের বাক্সগুলো তাঁদের আলাদা, কিন্তু এটাই ভারতীয় সংস্কৃতি, ভাই আর বোনের সম্পর্কে কোন রাজনীতি থাকেনা।আমাদের চেতনা, আমাদের মূল্যবোধ চিরকাল এটাই শিখিয়েছে।অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে রয়েছে পারিবারিক বন্ধন,দিদি প্রতি বছরই পরম স্নেহভরে রাখি বেঁধে আশীর্বাদ করেন।এবার কাদা রোডের বোনেদের হাত থেকে রাখি পরার সঙ্গে সঙ্গে দিদির হাত থেকেও রাখি পরলাম।এই অনুভূতি বর্ণনা করা যাবেনা। হোকনা সেই মিলনস্থল নিষিদ্ধ পল্লীর ছোট্ট এই প্রান্তরভূমি’।