দুর্গাপুর, ১৮ মার্চ: আপনার সন্তান-সন্ততি কি বাইরে পড়াশোনা অথবা চাকরি করে?তাহলে হটাৎ আপনার মোবাইল ফোনের হোয়াটসঅ্যাপে পুলিশের ছবি সম্বলিত মোবাইল থেকে কল আসবে আর আপনাকে বলবে আপনার মেয়ে অথবা আপনার ছেলে কি বাইরে? আপনি হ্যাঁ বলা মাত্রই শোনানো হবে হয় মেয়ের বা ছেলের কান্না।আর সেই কান্না শুনে আপনি সেই মুহুর্তে আপনার বোধ শক্তি হারাবেন এটাই স্বাভাবিক। এবার ওই পুলিশ অফিসারের ছবি সম্বলিত মোবাইল থেকে বলে হবে “” আপনার ছেলে বা মেয়ে ড্রাগ পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়েছে তাই আপনার ছেলের বা মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা হবে আপনি এক্ষুনি এই নাম্বারে ফোন-পে অথবা গুগল পে করুন।””ব্যাস সন্তান-সন্ততির স্নেহে অন্ধ মা-বাবারা অনেক সময় নিজেদের হিতাহিত জ্ঞান ভুলে গিয়ে এদের ফাঁদে পা দিয়ে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এমন অনেকগুলি অভিযোগ জমা পড়ল আসানসোল -দুর্গাপুরের সাইবার সেলে। জামতারা গ্যাং?নাকি এ এক নতুন প্রতারক গোষ্ঠীর কাজ? সাইবার ক্রাইম থানার অফিসারদের কপালে চিন্তার চওড়া ভাঁজ।
টার্গেট শহরের বাইরে বা রাজ্যের বাইরে পড়তে যাওয়া পড়ুয়ারা
আর অভিভাবকদের টার্গেট করছে প্রতারকরা।অভিভাবকদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে মাধ্যমে ফোন প্রতারকদের ফোনে বলা হচ্ছে তাদের মেয়ে ড্রাগ বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। পুলিশি কলের সময় মোবাইল স্কিনে পুলিশের পোশাক পরা আধিকারিকদের ছবি দেখা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে গুগল পের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর জন্য সময় মত টাকা না পাঠালে মেয়েকে মামলা দেওয়া হবে আর এই কথা শোনার পর অনেকেই প্রতারকদের ফাঁদে পা দিচ্ছে কেউ কেউ টাকাও পাঠিয়েছেন।
অভিভাবকরা যখন মেয়ের সাথে কথা বলতে চান প্রতারকদের ফোনে তখন ফোনের ওপার থেকে মেয়ের কান্নাকাটির আওয়াজ শুনতে পান অভিভাবকরা আর তাই শুনেই দিশা হারিয়ে খেলছেন অনেকে।দুর্গাপুরের বাসিন্দা অতনু মন্ডলের মেয়ে পড়াশোনা করে কলকাতায়। হঠাৎই তার কাছে ফোন আসে এবং এভাবেই টাকা চাওয়া হয়। অতনু বাবুকে ফোনে বার দুয়েক একটি মেয়ের কান্নার আওয়াজ শোনানো হয়। সেই সময় কিংকর্তব্যবিমূঢ় অতনু বাবু বাধ্য হয়ে যান টাকা পাঠাতে। ৫০০০০ টাকা তিনি পাঠিয়ে ফেলেন। এরপর টাকার পরিমান যখন তারা আরও বাড়াতে থাকেন, তখন অতনুবাবুর সন্দেহ হয়। এরপর তিনি তার মেয়েকে ফোন করে জানতে পারেন যে তিনি প্রতারণার শিকার হয়ে গেছেন। তৎক্ষণাৎ ছুটে আসেন দুর্গাপুরের সাইবার সেলে।””,
দুর্গাপুরের আরো এক ব্যবসায়ী সুজয় পোদ্দার তার মেয়ে কলকাতায় পড়েন। চলতি মাসের ১২ তারিখে তার কাছে হঠাৎ ফোন আসে। সেই একই কায়দায় তাকেও বলা হয় “”আপনার মেয়ে ড্রাগ পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। “”সুজয় বাবুকে ফোনে তার পরিবারের সবার বিস্তারিত নামও বলে দেয় প্রতারকরা। কিন্তু সুজয় বাবু বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে তার মেয়েকে ফোন করে প্রথমে। এবং তিনি জানতে পারেন যে তার মেয়ে সেই সময় হোস্টেলে। তাই তিনি আর্থিক দিক থেকে প্রতারণার শিকার হননি। কিন্তু যাদের ছেলে মেয়েরা বাইরে পড়াশোনা করছে তাদের পরিবারের সবার নাম এবং বিস্তারিত ডাটা এই প্রতারকরা পাচ্ছেন কোথা থেকে? তাহলে কি বেসরকারি এবং সরকারি কলেজগুলোতেই লুকিয়ে আছে এই প্রতারকদের নিজস্ব সোর্স?সাইবার ক্রাইমের এই নতুন পদ্ধতি যাতে আতঙ্কিত বাইরে পড়ুয়া বা চাকুরীরত সন্তান-সন্ততিদের অভিভাবকরা। আমরা বিষয়টি নিয়ে আসানসোল- দুর্গাপুর পুলিশ কমিনাশরাটের ডিসি(পুর্ব) অভিষেক গুপ্তার সাথে কথা বলি,তিনি জানান,””এরকম অভিযোগ জমা পড়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমেছে। দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে। “”এই ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাড়ি থেকে বাইরে পড়াশোনা করা অভিভাবকদের মধ্যে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে অভিভাবকদের অনুরোধ করা হয়েছে যে তারা যেন কোনভাবেই এই ধরনের কল এলে টাকা না দিয়ে দেন।।