দুর্গাপুর, ১৫ সেপ্টেম্বর :বাঙালি শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব। আর এই উৎসবকে ডেঙ্গু জ্বরের আতঙ্ক মুক্ত রাখতে দুর্গাপুর নগর নিগমের পক্ষ থেকে চ্যালেঞ্জের আকারে একগুচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে এ রাজ্যে বর্ষার সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ বিরাট আকার ধারণ করেছিল।বহু প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে রাজ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে। এবছর অতিমাত্রায় বৃষ্টি। যে কারণে সতর্ক দুর্গাপুর নগর নিগম দুর্গাপুরের বড় বড় পূজা মন্ডপ গুলিতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঢালাও প্রচারের বন্দোবস্ত করেছেন। ডেঙ্গু মুক্ত দুর্গোৎসব উপহার দেওয়ার জন্য দুর্গাপুর নগর নিগম এর পক্ষ থেকে বহু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানানো হয়েছে।

দুর্গাপুর নগর নিগমের নির্বাচিত বোর্ড এর সময়সীমা পার হয়েছে প্রায় তিন বছর আগে। পুর প্রশাসক মন্ডলী দ্বারা দুর্গাপুর নগর নিগমের ৪৩ টি ওয়ার্ড পরিচালিত হচ্ছে। এবছর লাগাম ছাড়া বৃষ্টি বর্ষার সময় থেকে। অতিবৃষ্টির জেরে দুর্গাপুরে প্রথম দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা মাথাচাড়া দিলেও পরবর্তীতে তাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম দুর্গাপুর নগর নিগম এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। দুর্গাপুর নগর নিগমের পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জন্য নিযুক্ত কর্মীরা প্রতিনিয়ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে সচেতন করার কাজ যেমন করেছেন পাশাপাশি মশার লার্ভা মারার জন্য নিয়মিত রাসায়নিক তরল স্প্রে নিয়ম করে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে করা হয়েছে বলে জানান দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রশাসক মন্ডলীর সদস্যা রাখি তিওয়ারি। তবে উৎসবের এই সময়কালের আগেও প্রবল বৃষ্টি অব্যাহত। তাই এতদিন পর্যন্ত দুর্গাপুরে সেভাবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা না বাড়লেও দুর্গাপুর নগর নিগম কিন্তু সেই পরিসংখ্যানে আত্মতুষ্ট হতে নারাজ।

সামনেই বাঙালি শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব সহ শারদ উৎসব। সুতরাং এই সময়কালে দুর্গাপুর কে ডেঙ্গু মুক্ত রাখাটা দুর্গাপুর নগর নিগম এবং দুর্গাপুর মহকুমা স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তাই “”সাবধানে বিনাশ নেই “এমন কথা মাথায় রেখেই আসন্ন দুর্গোৎসবকে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে সাধারণ মানুষকে আরো বেশি সচেতন করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে দুর্গাপুর নগর নিগম এর পক্ষ থেকে বলে জানান রাখি তিওয়ারি। তিনি বলেন, “”প্রত্যেকটি পুজো কমিটিকে বলা হয়েছে তারা যাতে নিজ নিজ পূজো মণ্ডপ বা মন্দিরগুলি সামনে ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতা সম্বলিত ছোট ছোট ব্যানার পোস্টার লাগান। দুর্গাপুর নগর নিগম এর পক্ষ থেকে দুর্গাপুর মহকুমার ৪৩টি ওয়ার্ডের মোট ৬৫টি বড় বড় পূজো উদ্যোক্তাদের ৫০০টি ব্যানার দেওয়া হবে।

এছাড়াও 11 টি বড় পূজা উদ্যোক্তাদের পুজো মন্ডপের সামনে ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতা সম্বলিত কিয়গস তৈরি করা হবে। “”পুজোর সময় কালেও বড় বড় পূজো আয়োজনের মন্ডপ এবং তার চারপাশের এলাকায় নর্দমা গুলিতে মশার লার্ভা মারার রাসায়নিক স্প্রে করা ছাড়াও যে সমস্ত দূর্গা পূজার আয়োজনকে ঘিরে মেলার আয়োজন হয়, সেই সমস্ত মেলাগুলিতে যাতে জল না জমা হয় সে বিষয়েও কড়া নজরদারি চালাবে দুর্গাপুর নগর নিগম বলে জানান মুখ্য প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়। নর্দমা গলিতে প্রয়োজনীয় ব্লিচিং পাউডার, মশা লার্ভা মারার রাসায়নিক স্প্রে করা ছাড়াও ডেঙ্গু রুখতে বিভিন্নভাবে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার প্রচার চালানো হবে।

গত জানুয়ারি মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দুর্গাপুর নগর নিগমের মোট ৪৩ টি ওয়ার্ডের মধ্যে মোট প্রায় ৬২ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। তবে তাদের মধ্যে অনেকেই বাইরের রাজ্য থেকে আসার পরেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন বলে জানান প্রশাসক মন্ডলীর সদস্যা রাখি তিওয়ারি।

দুর্গাপুর নগর নিগমের ৪৩ টি ওয়ার্ডের যে সমস্ত জলাশয়গুলিতে নবপত্রিকা স্নান করানো এবং প্রতিমা বিসর্জনের কাজ হয় সেই সমস্ত জলাশয়গুলির ঘাট গুলিকে পরিচ্ছন্ন করার কাজও দুর্গাপুর নগর নিগম এর পক্ষ থেকে করানো হচ্ছে বলে জানান মুখ্য প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়। আসন্ন দুর্গোৎসব সহ বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব শারদ উৎসব কালে দুর্গাপুর নগর নিগম এর পক্ষ থেকে কড়া চ্যালেঞ্জ দুর্গাপুর কে ডেঙ্গু মুক্ত রাখা।