পুরী,১৬ মার্চ: যুগ যুগান্ত ধরে উড়িষ্যার পুরীতে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এলাকায় জগন্নাথ মন্দির দর্শন করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ভক্তবৎসলদের পাশাপাশি বিদেশী পর্যটক ও কৃষ্ণ অনুরাগীরা ভীড় জমান। এই মন্দিরের সাথে জুড়ে আছে বহু অলৌকিক কাহিনি। যা কিন্তু প্রমানিত সত্য।যেমন অনেকেই জানেন যে সুউচ্চ কারুকার্য শোভিত পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরের ছাওয়া মাটিতে পড়েনা।সমুদ্রের এত কাছে মন্দিরের অবস্থান হলেও সমুদ্রের গর্জন এই মন্দিরে এসে পৌঁছায়না।কিন্তু কেন?বিশেষ করে সন্ধ্যার পরেই সামুদ্রিক ঢেউ এর গর্জন প্রবল হয়।তাহলেও কেন এই মন্দির থেকে কেন শোনা যায়না সমুদ্রের গর্জনের বিকট শব্দ? এর ব্যাখা হিসাবে প্রচলিত আছে একটি পৌরাণিক কাহিনি। কথিত ও প্রচলিত কাহিনি অনুসারে দেবর্ষি নারদ একসময়ে পুরীতে এই মন্দিরেই শ্রীজগন্নাথ দেবের দর্শনের জন্য আসেন।

জগন্নাথ মন্দিরের দ্বার রক্ষী হিসেবে সেই সময় উপস্থিত পবনপুত্র হনুমান।দেবর্ষী নারদ মুনি বজরংবালীর সাথে কুশল বিনিময়ের পর মন্দিরে প্রবেশ করার পর দেখেন জগতের নাথ প্রভুকে অত্যন্ত উদ্বিগ্নরূপে।অবিরাম নারায়ণের নাম জপ করা নারদ মুনী জগন্নাথদেব প্রভুকে উদ্বেগের কারণ জিজ্ঞাসা করলে প্রভু জগন্নাথদেব তাকে জানান, সমুদ্রের জলস্রোতের প্রবল শব্দের কারণে তিনি কোনও কর্মে মনোনিবেশ করতে অপারগ। তাই তিনি অত্যন্ত বিচলিত। ভীষণ শব্দের দরুন প্রবল উদ্বেগে সময় অতিবাহিত করছেন। মহর্ষি নারদ তার আরাধ্য দেবতার এই এই প্রবল উদ্বেগের কারণ পবন পুত্র হনুমানকে বলেন ।বিষ্ণুর অবতার রাম ও কৃষ্ণের ভক্ত পবন পুত্র হনুমান।অন্যদিকে ভগবান কৃষ্ণই যে জগতের নাথ জগন্নাথ ।

স্বাভাবিক ভাবেই জগন্নাথদেবেরও পরম ভক্ত সংকটমোচন বজরংবলী। হনুমান কিভাবে প্রভু জগন্নাথ দেবকে এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন তার ঘোর চিন্তায় পড়েন। বিপুল জলরাশির মাঝে দাঁড়িয়ে সমুদ্রদেবকে ভক্তি ও নিষ্ঠার সাথে আহ্বান জানিয়ে তাকে প্রভু জগন্নাথ দেবের সমুদ্রের গর্জনের আওয়াজে উদ্বেলিত হওয়ার কথা বলে ঢেউয়ের গর্জনকে শান্ত করার অনুরোধ করলে, সমুদ্রদেব বজরংবালি কে বলেন তার পিতা পবনদেবই একমাত্র পারেন সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জনকে স্তব্ধ করে জগন্নাথদেবকে স্বস্তিতে থাকতে দিতে।তখন অঞ্জনিপুত্রকে পবন দেব বলেন যে সমুদ্রের গর্জনকে তখনই স্তব্ধ করানো যাবে, যদি সামুদ্রিক যে বাতাস বয়সে তার দিশা পরিবর্তন করে উল্টোদিকে বায়ুকে যদি প্রবাহিত করা যায়।একথা শোনামাত্রই রামভক্ত হনুমান সমুদ্রে যেদিকে প্রবল বেগে বায়ু বইছিল তার থেকে আরও প্রবল বেগে উড়তে শুরু করা মাত্রই ঢেউ এর গর্জন আর মন্দিরের দিকে যায় না। শুধু তাই নয় সুপ্রাচীনকালের জগন্নাথ দেবের মন্দিরের যে ধ্বজা সেই ধ্বজা আজও যেদিকে বায়ু প্রবাহিত হয় তার উল্টোদিকে ওড়ে। অজানা এই রহস্য বহু ভক্তবৎসালদের কাছে।