পরিত্যক্ত অস্বাস্থ্যকর আবাসনে হাত বাঁধা অবস্থায় একাকি পড়ে তিনছেলের অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা,আধুনিক মানব সভ্যতার নিন্দনীয় ছবি দুর্গাপুরে

দুর্গাপুর, ১২ জুলাই: পরিতক্ত আবাসনের ভেতর থেকে গোঙানি শোনা যাচ্ছে। তা শুনেই ভেতরে ঢুকেই চোখ কপালে উঠলো স্বাস্থ্য কর্মীর। একটি ভাঙা খাটে চার হাত পায়ে রয়েছে দড়ি বাঁধা। ঝরে পড়ছে চোখ দিয়ে জল মিশ্র ইস্পাত কারখানার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর। এমনই অমানবিক ঘটনা ঘিরে নিন্দার ঝড় উঠলো দুর্গাপুর নগর নিগমের ৪নং ওয়ার্ডের জয়দেব এভিনিউতে। দুর্গাপুরের জয়দেব এভিনিউ এলাকার মাগারাম ঘোষ বয়সটা ৮০ পেরিয়েছে। রয়েছে তিন ছেলেও।

এক ছেলে ইস্পাত কারখানার কর্মী আর দুই ছেলে বেসরকারি সংস্থার কর্মী। দুর্গাপুরেই অন্যত্র বাস করেন তিন ছেলেই। কিন্তু অসুস্থ বৃদ্ধ বাবার জায়গা হয়নি তাদের বাড়িতে। কিন্তু সেই তিন ছেলেই দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার পরিত্যক্ত একটি আবাসন দখল করে খাটে শুইয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে বাবাকে, এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের। শুক্রবার সকালে দুর্গাপুর নগর নিগমের স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি ডেঙ্গি সার্ভে করছিলেন। তখনই এই অমানবিক ঘটনা নজরে আসে। খবর দেওয়া হয় প্রাক্তন পুরমাতা মণি দাশগুপ্তকে। এই খবর শুনেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই বৃদ্ধর বড় ছেলে দয়াময় ঘোষকে ডাকেন এবং তুলোধোনা করেন। খবর দেওয়া হয় দুর্গাপুর থানার পুলিশকেও। এলাকাবাসীরাও ভিড় জমান দয়াময় ঘোষকে তুলোধোনা করেন। তারপরেই সকলে মিলে অসুস্থ বৃদ্ধ মগারাম ঘোষকে হাত পায়ের দড়ি খুলে নিয়ে যাওয়া হয় দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতলে। বড় ছেলে দয়াময় ঘোষ বলেন,”বাবা এখানেই থাকতেন। সেই জন্য এখানেই রাখা হয়। বাবার চিকিৎসা হয়েছিল তাই যাতে না পড়ে যায়, সেই জন্য দড়ি বেঁধে রাখা হয়। আমি নিয়মিত আসি বাবার দেখভাল করি। সংসারের অবস্থায় খারাপ হওয়ায় বাবার আবাসন ভাড়া দেওয়া হয়েছে সেই জন্য বাবাকে দখল করা আবাসনে রাখা হয়। তবে অমানবিক কিছু ঘটেনি।” প্রাক্তন পুরমতা মনি দাশগুপ্ত বলেন,”চরম অমানবিক ঘটনা। এই নির্মম ঘটনা আগে কোনদিন দেখিনি। মাগারাম বাবু এলাকার খুব ভালো মানুষ। কিন্তু তার ছেলেরা যে এরকম করতে পারে তা কল্পনাও করতে পারিনি। আমি পুলিশকে জানিয়েছি প্রয়োজনে ছেলেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করব। এই ধরনের ঘটনা যাতে সমাজে না ঘটে সেই নিয়েও সচেতনতা বাড়াবো।”

Share it :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *