দুর্গাপুর, ১৭ ডিসেম্বর : দুর্গাপুরে গণ উপস্থিতির বিচারে দুর্গাপুর উৎসবের দ্বিতীয় বর্ষের শেষ দিন এক নয়া রেকর্ড হল।তবে আজ দ্বিতীয় বর্ষের উৎসবের শেষদিনে মধুরেণসমাপয়েৎ ঘটল যখন রুপম ইসলাম তার গান শেষ করে মঞ্চ ছাড়তেই নরেন আর কবি একসাথে মঞ্চে উঠলেন।সেই প্রথম দিন অর্থাৎ ২০২৪ র দুর্গাপুর উৎসবের উদ্বোধনের দিন দুজনের এক মঞ্চে দূরে দূরে বসে থাকা,যা দেখে কবি ও নরেনের মধ্যে “” ঠান্ডা লড়াই””শুরু হয়েছে বলে একটা গুঞ্জন উঠেছিল।আর সেই গুঞ্জন যে অনেকটা সত্য তা বোঝা যাচ্ছিল উৎসবের বাকি দিনগুলোতে। নরেন অনুপস্থিত আর কবি এসেও আসছেন না।বেচারা উদ্যোক্তা বনিকসভা পড়ে বিপাকে।তবে এই কোল্ড ওয়ারের নেপথ্যে থাকা কিছু জার্সি বাদলধারি হয়ত ভেবেছিলেন “” এই তো দারুন।কবি ও নরেনের এই বিভেদে আমাদের ফায়দা ষোলো আনা””।কিন্তু বারবার রাজনৈতিক রঙ বদলানো দুর্গাপুরের বি-জোন এলাকার এক “”গিরিগিটী””সফল হলেন না।২০২৪ র উৎসবের শেষ দিনে মঞ্চে স্পট লাইটের ঝলকানি আর রাজীব গান্ধী ময়দানে উপস্থিত তখন প্রায় ২০ হাজার জনতার সামনে কবি মঞ্চে দাঁড়িয়ে চেঁচালেন “” জয় দুর্গাপুর””,আর নরেন তাতে আরও সুর চড়িয়ে বললেন “” জয় বাঙলা””।কিন্তু উনি?দুর্গাপুরের অভিভাবক যিনি দুর্গাপুর উৎসবেরও অভিভাবক মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার তিনিও বোধহয় কবি ও নরেনের মধ্যে এই ঠান্ডা লড়াই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কেও বা কারা লাগিয়ে দিয়েছেন বুঝেই তিনিও উৎসবের এই কয়েকটা দিন অনুপস্থিত থেকেই গেলেন। সদাহাস্য, সুমিষ্টভাষী প্রদীপবাবু আগাগোড়ায় দুর্গাপুরের অগ্রগতি চেয়েছেন। রাজনৈতিক কচকচানি তিনি পছন্দ করেন না। তিনি পছন্দ করেন দুর্গাপুরের মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।কিন্তু কবি ও নরেন বাবুদের দায়িত্ব ছিল অন্তত প্রদীপ বাবুকে চোখে আঙুল দিয়ে একবার দেখিয়ে দেওয়া যে 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনেও আপনাকে পরাজিত করতে চেয়েছিলেন যিনি, তাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান দুর্গাপুরের বি-জোন এলাকার সেই জার্সি বদলকারী”” বহুরূপী।””আসলে তিনিই যে উৎসবের আঙিনায় অন্যের কাঁধে বন্দুক রেখে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রদীপ বাবুর হৃদয় হরন করেছিলেন। উনি কৃত্বিত্ব চান।উনি চান সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে অবিরাম মঞ্চের সামনে পাদপ্রদীপে ঘোরাফেরা করতে,উনি চান কর্তব্যরত সাংবাদিকদের “” খেদিয়ে দিতে””,আসলে উনিই চান প্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত নরেন কবির ডুয়েল ম্যাচকে ভেস্তে দিয়ে তাকে বিতর্কিত করে তুলতে।তাই বান্টি সিং, রহমতদের কৃতিত্ব ছোট হয়ে যায়। আর উনি হয়ে যান সবার মাথা। আসলে এই ভাবেই তিনি বাম আমলে অতি সুকৌশলে কোটি কোটি টাকার সিস্টেমের নেপথ্য মাথা হয়ে থেকে গিয়েছিলেন। উন্নতি ঘটিয়েছিলেন নিজের এবং নিজের আত্মীয় পরিজন আর তল্পিবাহক কয়েকজনের। বামেরা চলে যেতেই তিনি প্রথমদিকে প্রভাত ও অপুকে কাজে লাগিয়েছিলেন। তারপর সুকৌশলে তাদের মধ্যেও ফাটল ধরিয়েছিলেন। এরপর বিশু বনাম অপুর লড়াই। তার নেপথ্যেও ঐ রাজনৈতিক ভোলবদলকারীর একটা বড় ভূমিকা ছিল। কিন্তু কবি ও নরেনের উৎসবের শেষ দিনে মঞ্চে একসাথে প্রত্যাবর্তন এটা কি এই সমস্ত ধান্দাবাজদের ফসিল হয়ে যাওয়াকে নিশ্চিত করবে?২০২৫ এর উৎসব মঞ্চে কারা উঠবেন আর কারা বাইরে থাকবেন? তাও কি ঠিক করে দেবেন এই সমস্ত কূটনৈতিক ষড়যন্ত্রীরা?তবে যায় হোক না কেন দুর্গাপুর উৎসবের শেষ দিনে নরেন ও কবির হঠাৎ ফিরে পাওয়া ছন্দে শেষে দেখা গেল ধান্দাবাজেদের মুখ শুকনো।তাদের মুখের হাসিটাও কেমন যেন একটা লাগলো।শাসকের সঙ্গে থেকে সু- কৌশলে নিজের স্বার্থসিদ্ধি এটাই তো তার চাওয়া।সামনেই দুর্গাপুর পৌরসভার নির্বাচন। তারপরেই ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন। রাজনৈতিক ভোলবদলকারি ২৬ এর নির্বাচনের আগে আবার পাঁচিলে উঠে পড়বেন। কোন দিকে লাফালে তিনি সুরক্ষিত থাকবেন তিনি ঠিক বেছে নেবেন।তবে ২০২১ এর নির্বাচনে অনেকেই অন্যদিকে লাফিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তাতে কি? ক্ষতি তাদের খুব একটা হয়নি। তাই উৎসব হোক বছর বছর, তবে সেই উৎসবে যেন আপনজনেরা ব্রাত্য আর ওই পাঁচিল থেকে ঝাঁপ দেওয়া ওরা যেন আপন না হয়ে যায় বারবার বহুবারের মতো।